নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতকরা সিলেট অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী ফল। সুস্বাদু এ ফলটিকে আঞ্চলিক ভাষায় অনেকে ‘হাতকরা’-ও বলে থাকেন। স্বাদে ঘ্রাণে অনন্য এ ফলের রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। বিশেষ ঘ্রাণযুক্ত লেবু জাতীয় এ ফলটি টক স্বাদযুক্ত ফল, যা সব্জির আনুষঙ্গিক হিসেবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়।
মাছ, মাংস, সব্জি, ডালসহ অন্যান্য রান্নায় এই সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এ ফলটি ব্যবহৃত হয়। আচার তৈরিতেও এ কোন জুড়ি নেই।
সাতকরা একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল এবং এর পুষ্টিমান অনেক উন্নত। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এটি ওষধি ফল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাতকতার তৈরি খাবারে মুগ্ধ হয়েছেন দেশি-বিদেশী অসংখ্য মানুষ ও পর্যটক। সিলেটে এসেছেন আর সাতকরার তৈরি খাবার খাননি বা সাতকরার তৈরি খাবারের ঐতিহ্যে মুগ্ধ হননি এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সিলেটের এ ঐতিহ্যবাহী সাতকরায় হয়েছেন বিমোহিত। নিয়েছেন এ সুস্বাদু ফলের অনন্য স্বাদও। শুধু আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীই নয়, এ ফলের অসাধারণ স্বাদে গন্ধে মুগ্ধ হয়েছেন বিদেশী অনেক নামি-দামি ব্যক্তবর্গও।
সিলেটের এ ঐতিহ্যবাহী ফলটির ঘ্রাণ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। শুধু তাই নয়, এটি রপ্তানি বিদেশেও। তাই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও এ ফলটি দেশের অর্থনীতিতে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাই সিলেটের সাতকরা-চাষীরা এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সাতকরার বর্ণনা: সাইট্রাস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত লেবুজাতীয় এই ফল ভারতের আসামের পাহাড়ি এলাকার আদি ফল, যা বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাটের জাফলং ছাড়াও এখানকার পাহাড়-টিলায় চাষ হয়। লেবুগাছের মতো সাতকরার কাঁটাভরা গাছ ২০ থেকে ২৫ ফুট লম্বা হয়। ফাল্গুন মাসে ফুল আসে। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়ে ফল হয়। কমলা চাষের মতো নিরবচ্ছিন্ন কোনো চাষপদ্ধতি না থাকায় সাতকরার উৎপাদন সংক্রান্ত কোনো পরিসংখ্যান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে নেই। সিলেটে এর প্রচুর চাহিদার কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আসাম ও মেঘালয় থেকেও সাতকরা আমদানি হয়।
সাতকরা টক স্বাদ ও অনন্য ঘ্রাণযুক্ত ফল হওয়ায় এটি দিয়ে তৈরি আচারের জুড়ি নেই। এই সাতকরা দিয়ে আচারের অন্তত ৫০টি রেসিপি তৈরি করা যায়। এই সুস্বাদু সাতকরার আচারের বাইরের দেশেও প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
পাঠকদের জন্য সুস্বাদু সাতকরার আচারেরেএকটি রেসিপি দেয়া হলো:
সাতকরার আচার:
উপকরণ: সাতকরা ৬টি, তেঁতুল পিউরি ১ কাপ, সিরকা ২ কাপ, চিনি দেড় কাপ, লবণ ২ টেবিল চামচ, সরিষা বাটা ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো ২ চা চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ চা চামচ, ভাজা পাঁচফোড়ন গুঁড়ো ১ টে· চামচ, ভাজা শুকনা মরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, ভাজা ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, আস্তা পাঁচফোড়ন আধা চা চামচ, সরিষার তেল ৩ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালী: সাতকরা হালকা করে চেঁছে ওপরের সবুজ আবরণ ফেলে ধুয়ে-মুছে নিতে হবে। ভেতরের অংশ বাদ দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন। কাটা সাতকরা ১ কাপ সিরকা, অল্প লবণ, হলুদ দিয়ে প্রেসার কুকারে দুই শিসে (সিটি) সেদ্ধ করতে হবে। কড়াইতে তেল গরম হলে আস্ত পাঁচফোড়ন দিতে হবে। রসুন বাটা, আদা বাটা, হলুদ, লবণ, মরিচ গুঁড়ো, সামান্য সিরকা দিয়ে কষাতে হবে। কষানো হলে সাতকরা দিয়ে ৫ মিনিট নাড়তে হবে। এখন বাকি সিরকা, চিনি, সরিষা বাটা, তেঁতুল পিউরি দিয়ে ১৫ মিনিট নাড়তে হবে। সাতকরা ও তেঁতুল মাখা মাখা হলে ভাজা মসলা গুঁড়ো দিয়ে আরও ২ মিনিট নেড়ে আচার চুলা থেকে নামাতে হবে। পরপর ঠাণ্ডা করে কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন।