বিশেষ প্রতিবেদন: ভিআইপি আসন মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১। এই আসন নিয়ে সব জল্পনা ভোটারদের। আসতে পারে চমক, এমন আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। এই আসনের দিকে চোখ সিলেটের ভিআইপি প্রার্থীদেরও। এখনই আসন ছাড়ছেন না অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তারই ছোট ভাই ড. মোমেনও আছেন মনোনয়নের প্রত্যাশায়। আশ্বাসে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন। আর অর্থমন্ত্রীর পরিবারকে টক্কর দিতে প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
এই পাঁচ ভিআইপি প্রার্থী একই আসন থেকে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তারা এই আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জমাও দিয়েছেন কেউ কেউ। তবে, কার ভাগ্যে জুটবে কাঙ্ক্ষিত মনোনয়ন এ নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হবে চূড়ান্ত ঘোষণা পর্যন্ত।
মনোনয়নপত্র ক্রয় করে ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না প্রার্থীরা। তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে লবিং অব্যাহত রেখেছেন। দলীয় হাইকমান্ডের কাছে চালিয়ে যাচ্ছেন জোর তৎপরতা।
তবে, মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে পাঁচজনই আশাবাদী। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, প্রার্থী নির্বাচন করবে মনোনয়ন বোর্ড। সুতরাং প্রার্থী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না কে হচ্ছেন সিলেট-১ আসনের প্রার্থী। তবে, চমকও আসতে পারে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। নতুন মুখ আসতে পারে এই আসনে।
কয়েক দিন আগেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি সিলেট-১ আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন না। তার ছোট ভাই ড. একে আব্দুল মোমেন প্রার্থী হচ্ছেন। দল থেকে তাকে দেয়া হলে তিনি নির্বাচন করবেন। সেই অনুযায়ী এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন জাতিসংঘ ফেরত কূটনীতিক ড. একে আব্দুল মোমেন। এমনকি ড. মোমেনকে মনোনয়ন কেনার ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন বড় ভাই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। শুধু তাই নয়, অর্থমন্ত্রী নিজে সঙ্গে গিয়ে ড. একে আব্দুল মোমেনের মনোনয়নপত্র ক্রয় করে নিয়ে আসেন। রবিবার (১১ অক্টোবর) তিনি নিজে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়ে এসেছেন।
ড. একে আব্দুল মোমেন প্রায় তিনবছর ধরে সিলেটের নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জাতিসংঘ থেকে বিশেষ প্রয়োজনে দেশে নিয়ে এসেছিলেন। এরপর থেকে তিনি বড় ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছায়াসঙ্গী হয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
এদিকে, ড. মোমেনের জন্য অর্থমন্ত্রী নিজে গিয়ে মনোনয়নপত্র কিনলেও তার জন্য আলাদা একটি মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন তার ছেলে সাহেদ মুহিত। সিলেট সিক্সার্সের চেয়ারম্যান সাহেদ মুহিত অনেকটা নীরবে ওই মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। তবে, অর্থমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, এবার সিলেট-১ আসন থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রার্থী হতে চাচ্ছেন না। যদি ড. মোমেন প্রার্থিতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েন তবে অর্থমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত নিজেই এ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন।
দুইবছর ধরে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও আইন সচিব ছহুল হোসাইন। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে নামার ঘোষণা দিয়ে তিনি মাঠে নামেন। সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি এরই মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ছহুল হোসাইন সিলেটে এলে তার কাজিটুলাস্থ বাসায় গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা দেখা করেছেন। একই সঙ্গে তাকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে এবার সিলেট-১ আসন থেকে প্রার্থী হতে চান সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
গত শুক্রবার বিকালে তার পক্ষে দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র কেনেন তার ছেলে রুবাইয়াত ছহুল ও ভাতিজা সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন সজিব। আর এই মনোনয়নপত্র ক্রয়ের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে নামার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন। তার ভাতিজা দেলোয়ার হোসেন সজিব জানিয়েছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে নামতে চান ছহুল হোসাইন। এ কারণে তার পক্ষে আমরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আওয়ামী লীগ থেকে ছহুল হোসাইনকে প্রার্থী দেয়া হলে তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে নামবেন।
সিলেট-১ আসনে সবার আগে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বারের পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। প্রথম দিনই তিনি দলীয় কার্যালয় থেকে দুটি মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। সিলেট-১ আসন ছাড়া তিনি সিলেট-৩ আসন থেকে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের অভিভাবক হয়ে টানা ছয়বছর তিনি কর্তৃত্ব খাটিয়েছেন সিলেটে। এখন তিনি ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হলেও সিলেটে তার বলয়কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সিলেটের রাজনীতিতে সব সময় অর্থমন্ত্রী বলয়ের বিরোধী।
বিগত ১০ বছর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্কের টানা পোড়েন চলেছে। এ কারণে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি এই আসন থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রী এই আসন থেকে নির্বাচিত হন।
অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানিয়েছেন, তিনি সিলেটের পরীক্ষিত নেতা। দল পরিচালনা করেছেন যোগ্যতার সঙ্গে। পাশাপাশি তিনি অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ কারণে এবার তিনি সিলেট থেকে নির্বাচন করতে চান। দল মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করবেন বলে জানান।
সিলেট-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এ কারণে তিনি রবিবার (১১ নভেম্বর) সকালে সিলেট থেকে ঢাকা পৌঁছে দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন এবং দুপুরের দিকে তিনি দলীয় মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন।
সিলেটের সাবেক এই মেয়র জানিয়েছেন, তিনি তার দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের আগ্রহে মনোনয়নপত্র ক্রয় করে তা জমাও দিয়েছেন। স্বাধীনতা উত্তর সময় থেকে তিনি সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। দুইবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। এ কারণে সিলেটের মানুষ ও দলের নেতারা তাকে চায়। এ জন্য তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান।
তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ জনবান্ধব ও কর্মীবান্ধব নেতা চায়। এতে করে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয় বেশি। এ কারণেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন বলে জানান।