• এপ্রিল ১০, ২০২০
  • মতামত
  • 1269
“চুরদের মৃত্যুভয় নেই, কিছু মানুষ তো বাঁচতে চায়”

মতামতঃ বিশ্ব ভূমন্ডল কাঁপছে, আকাশ থেকে অনেক তারা খসে পড়ছে বাতাস বারী হচ্ছে, প্রতিবেশী নীরব হচ্ছে। শোকের চাদরে মোড়ানো মানবতা, বিবেক সে তো কবেই মরে গেছে। চারদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্ক, দেশ প্রবাসে অনেক প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথা। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে, এর শেষ কোথায় কেউ জানেনা, আক্রান্ত হওয়ার ভয় আছে সবার মনে। করোনাভাইরাস সংক্রমণে দেশ বিদেশে হাজার হাজার স্বজনের মৃত্যু সংবাদ ভাবিয়ে তুলেছে আমাদের। মৃত ব্যক্তির জানাজায় মানুষ উপস্থিত হয় না,অনেকের সুযোগ হয় না কারো থাকে সংক্রমণের ভয়, কেউ বলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি ভাই।

মানুষ মরণশীল প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন থাকে আমার মৃত্যুর পরে জানাজায় অগণিত মানুষ উপস্থিত হবে,ইহকালের ভালো সৎকর্ম আলোচনা হবে পরকাল হবে পরম শান্তিময়। মৃত্যুর পরে ধন সম্পদ কারো সাথে যাবে না,শুধু মহৎ কর্মই থাকবে আলোচনায়,এটাই হচ্ছে একজন প্রকৃত ঈমানদার মুসলমান ভালো মানুষের বড় সম্পদ। প্রিয়জন যেন দোয়া করে পরকালে জান্নাত নসিব হয়,এই চাওয়া থাকে সবার অন্তরে।

আজকের পরিস্থিতি এই ছোট্ট অনুভূতি হৃদপিণ্ডকে দুমড়ে-মুচড়ে চিন্তার জগতকে অস্থির করে তুলেছে, নিশ্চয়ই চিন্তা করছেন আপনার আমার মৃত্যু কেমন হবে ?
করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মতো এমন মৃত্যু তো আমরা কখনও চাইনি, কারো কাম্যও তা নয়।
হে আল্লাহ আমাদের গোনাহের কারণে তুমি এতোটা নিষ্ঠুর হইওনা, যে মৃত্যুতে গোসল নাই জানাজা নাই এমন মৃত্যু তুমি কোন মুসলমানদের দিও না,আমাদের ক্ষমা করো মাবুদ।

বন্ধুরা চিন্তা করেছিলাম লিখব আমাদের চারপাশে মন খারাপের কতো ঘটনা নিয়ে। কিন্তু কোথায় যেন ডুবে গেলাম আমি নিজেই, হারিয়ে গেল আমার ভাবনা।
ও মানুষ ভাই সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।

কিছু মানুষের আচরণে মনে হয় কখনও তাদের মৃত্যু হবে না,কিয়ামত পর্যন্ত তারা বেঁচে থাকবেন। অনেক শক্তিধর মন্ত্রীদের বক্তব্য শোনলে অনেকের মতো আমারও মন খারাপ হয়,স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন আমি কিছুই জানিনা আমি আমার প্রাপ্য আমি পাচ্ছি না। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি আছে যা অনেক দেশেই নেই বলেন অন্য মন্ত্রী। অথচ অনেক হাসপাতালে নূন্যতম সেবা দেবার ব্যবস্থাও নেই। সিলেটে আক্রান্ত চিকিৎসকের স্বাস্থ্যসেবার ত্রুটি নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। আইসোলেশন আছে নামে মাত্র, ভেন্টিলেশন নেই,অনেক হাসপাতালে থাকলেও ব্যবহার উপযোগী নয়। ডাক্তারদের পিপিই নেই শোনতে হলো কতদিন। শহর গ্রামের অগণিত দিনমজুর মানুষ কর্মহীন,তাদের জীবনমান বেঁচে থাকার সংগ্রাম দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। অন্যদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রিলিফের ত্রাণ চুরির মহোৎসবে ব্যস্ত।
আমি কিন্তু বলছিনা, দেশের অনেকেই বলছে এরা করোনার চাইতেও অনেক শক্তিশালী এরা মহাচুর।

মাঝে মাঝে ভাবি কেন মানুষ মন খারাপ করে কষ্ট পায়। আহারে মন কেন খারাপ হবে, এভাবেই তো হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চলেছে প্রিয় স্বদেশ। সিঙ্গাপুর কানাডায় বসবাস করছেন মনে না করে, বিশ্ব পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা একটু আঁচ করেন। সামান্য চাল ডালের ব্যবস্থা করে ঘরে রাখেন, বেঁচে থাকলে আমাদের মহা শক্তিধর নেতা এমপি মন্ত্রীদের বক্তব্য শোনতে হবে, ধৈর্য্য বাড়াতে হবে। বাঙালি জাতির রাগ নাই, সে কারনে আবেগের ফেরিওয়ালারা এখনও নোংরা রাজনীতির ব্যবসায় ব্যস্ত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কিছু সুবক্তাদের ছুঁটিতে পাঠানো উচিত, আপনার অচল মালগুলো লকডাউনে রাখেন। কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ের যৌথ সমন্বয় আরও বাড়াতে হবে,কিছু মন্ত্রী এমপিদের টিভি স্কিনের সামনে না আনাটাই হবে আপনার জন্য স্বস্থির, দেশবাসী এদের মুখ দেখতে চায় না।

লক্ষ্য রাখুন সকল চুরেরা একত্রিত হয়ে যেন বলতে না পারে আমরা সবাই ঐক্যজোট, আমাদের দিতে হবে ত্রাণ লুটের আরও সুযোগ। তাদের নিয়ন্ত্রণ করুন,নির্মূল করুন
শাস্তি দিন, নয়তো যে ভয়াবহ মহামারির পূর্বাভাষ দিচ্ছেন করোনার চাইতে স্বাভাবিক অনাহারী মানুষের মৃত্যু সংখ্যা অনেক বেশি হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,এমপি মন্ত্রী সকল দলের সংগ্রামী নেতাদের বলছি টর্নেডো ধেয়ে আসছে সতর্ক হোন,বিপন্ন হতে পারে আপনার আমার অগণিত মানুষের জীবন । আপাতত রাজনীতি নয়, প্লিজ দেশের কথা একটু ভাবুন। একটু চিন্তা করুন কি রেখে যাচ্ছেন দেশের জন্য, কি আছে এই দেশে,কি নিয়ে বেঁচে থাকবে এদেশের নিরণ্য মানুষ।
জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেন, প্রতিটি হাসপাতালকে পর্যাপ্ত দ্রুত সেবার উপযোগী করুন, প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন সেন্টার প্রতিটি এলাকায় গড়ে তুলুন। কার্ডিয়লজির ইকুইপমেন্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করুন, ভেন্টিলেটরের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। হাসপাতাল ক্লিনিকে ডাক্তারদের সেবার মানসিকতা আরও বাড়াতে হবে,ডাক্তারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই কাজ গুলো আমাদের করতে হবে, খুব দ্রুত করতে হবে দেশবাসীর প্রয়োজনে।
মহান আল্লাহ যেন আমাদের সহায় হউন।

লেখকঃ মো. নিজাম উদ্দিন
সাবেক চেয়ারম্যান খুরমা (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদ, ছাতক
যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি।