- এপ্রিল ১৪, ২০২০
- আন্তর্জাতিক
- 804
এমদাদ চৌধুরী দীপু, নিউইয়র্ক থেকেঃ একদিনে বিস্ময়কর পরিবর্তন এসেছে আমেরিকার করোনা পরিস্থিতিতে। কমেছে মৃত্যু এবং আক্রান্ত রোগীর হার,এর বিপরীতে সুস্থতার হার বেড়েছে আগের চেয়ে বেশী। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে উন্নতির এই ধারাবাহিকতা থাকলে বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন কী উঠে যাবে? এ নিয়ে হোয়াইট হাউস এর সাথে স্নায়ু যুদ্ব চলছে পূর্ব উপকুলের রাজ্য কেলিফোর্নিয়া এবং পশ্চিম উপকুলের রাজ্য নিউইয়র্ক এর গভর্নরের। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে বলেছেন লকডাউন তুলে নেয়ার ঘোষনা দেয়ার একমাত্র ক্ষমতা তার।
এদিকে নিউইয়র্ক এবং কেলিফোর্নিয়ার গভর্নর লকডাউন তুলে দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
আমেরিকার করোনা পরিস্থিতির একদিনের এই পরিবর্তনকে বিচ্ছিন্ন বিষয় বলে মনে করছেন এই মহামারীর সাথে সংশ্লিস্ট অনেক মহল।
করোনা সনাক্তকরন সেন্টারে কাজ করেন এমন একজন বাংলাদেশী ডাক্তার আমানুর রহমান মনে করেন আমরা আশাবাদী হতে চাই। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং সাবধানতার মাধ্যমে এ বৈশ্বিক মহামারী থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি এমন মন্তব্য করে ডাঃ আমান বলেন, করোনা মূক্ত হওয়ার জন্য আমেরিকায় সব ধরনের প্রচেস্টা অব্যাহত আছে।
আমেরিকায় করোনায় আক্রান্তদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্যে আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি, জালালাবাদ এসোসিয়েশন এবং মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা অন্যতম। কবরের ব্যবস্থা করা, মারা যাওয়া পরিবারকে আর্থিক সহযোগীতা প্রদান, মরদেহ ফেউনারেলে রাখা, জানাজা, দাফন কাজে সহযোগীতা করছে এসব সংগঠন।
এদিকে বাংলাদশীদের ঘুরে দড়ানোর একটা চেস্টা লক্ষ্য করা গেছে। জেকসনহাইটসের বাংলাদেশী মালিকানাধীন গ্রোসারীগুলো খোলতে শুরু করেছে, শুধু জেকসন হাইটস নয় ব্রংকসের অনেক গ্রোসারী এবং রেস্টুরেন্ট খোলেছেন বাংলাদেশী মালিকরা।
জেকসনহাইটে খা খা করা নীরব পরিবেশে দরোজা খোলেছে ইত্যাদি গ্রোসারী, মান্নান হালালমিট, হাটবাজার, আপনাবাজার খোলা অনেক আগ থেকে। ব্রংকসে খোলা হয়েছে বাংলাবাজার, খলিল বিরিয়ানী, ইত্যাদি গ্রোসারীসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্টান।
এছাড়া লকডাউনে জরুরী কাজে প্রতিদিন রাস্তায় নামেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, সোমবার কুইন্স এর কিছু এলাকাঘুরে দেখা গেছে সে চিত্র। তবে মাস্ক, গ্লাভস ,পরে সাবধানতা বজায় রেখে ভয়, আতংককে সাথী করে চলাফেরা করছে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ।
করোনা ভাইরাসে মৃত্যু কিংবা আক্রান্ত দুই বিবেচনায় শীর্ষদেশ আমেরিকা। তবে ১২এপ্রিল এর চেয়ে আজ ১৩ এপ্রিল আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ৪হাজার।
বিশ্বে মোট আক্রান্তের প্রায় এক তৃতীয়াংশ আমেরিকায়, বর্তমানে আক্রান্ত রোগী ৫লাখ ৮৬হাজার এর উপরে। একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬হাজার, এটি একদিন আগে ছিল ৩০ হাজার। ফলে ৪হাজার কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা। এদিকে আজ আমেরিকায় মৃত্যুর সংখ্যা ২৩হাজার ৬১০জন। একদিনে মৃত্যু ১৪৯৫জনের। একদিন আগে এটি ছিল ১৫২৮জন,ফলে কমেছে মৃত্যুর সংখ্যা।
স্বস্থিকর খবর হচ্ছে সুস্থতা বেড়েছে আগের চেয়ে, আগে একদিনে সুস্থতার সংখ্যা ছিল গড়ে ২হাজার সেটি বেড়ে হয়েছে ৪হাজার।
আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন নিউইয়র্কে পৃথিবীর সব দেশের উপরে। ইতিমধ্যে শতাধিক বাংলাদেশীর মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে, নতুন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে কয়েকজনের।
আমেরিকার নিউইয়র্ক সময় রাত ৯টা, সোমবার এখানে রোগী ১লাখ ৯৫হাজার ৬৫৫জন। একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫হাজার কমেছে। এর আগে একদিনে ১০ হাজার আক্রান্তের রেকর্ড ছিল। এছাড়া নিউইয়র্কে রোবারের চেয়ে সোমবার ৮৭জন কম মারা গেছেন। আজ সোমবার মৃত্যু ৬৭১জনের,রোববার নতুন মৃত্যু ছিল ৭৫৮ জন। নিউইয়র্কে আগে সুস্থ রোগী ছিল ১৩হাজার,আজ সেটি বেড়ে হয়েছে ১৭হাজার।
আমেরিকার ৪৬টি রাজ্যে আজো মারা যাওয়ার খবর আছে । এ পর্যন্ত আমেরিকাজুড়ে ৩৬ হাজার ২১৮জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এদিকে করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে, বাংলাদেশী একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন নিউইয়র্কে ভারতীয়, কিংবা পাকিস্তানী অভিবাসীদের চেয়ে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশী । সংকটাপন্নদেও জন্য প্রতিদিন চলছে দোয়া মাহফিল এসব দোয়া মোনাজাতসহ অন্যান্য ধর্মীয় আয়োজন চলছে অনলাইনে।
নিউইয়র্কে আক্রান্তের সংখ্যার ১লাখ ৯৫হাজারের উপরে। আর মৃতের সংখ্যা প্রায় ১০হাজার ৫৬জন।এদিকে নিউইয়র্কের পর উদ্বেগজনক অবস্থা নিউজার্সীতে। আক্রান্ত প্রায় ৬৪হাজারের উপরে মারা গেছেন ২৪৪৩জন। অবনতি হয়েছে মিশিগানের করোনা পরিস্থিতি, এখানে মৃত্যু ১৬০২জনের নতুন করে মৃত্যু ১১৫জনের,মোট আক্রান্ত রোগী ২৫হাজারের উপরে।
আক্রান্ত রোগী বিবেচনায় শীর্ষ রাজ্য সমূহঃ
আক্রান্ত রোগী বেশী যেসব রাজ্যে সে তালিকায় রয়েছে ওয়াশিংটন আক্রান্ত ১০হাজারের উপরে, কেলিফোর্নিয়া ২৪হজারের উপরে। মেসাজুসেট ২৬ হাজারের উপরে, ইলিনইস প্রায় ২২হাজার । পেনসেলভেনিয়া ২৪ হাজারের উপরে, ফ্লোরিডা ২১ হাজারের উপরে, লুসিয়ানা প্রায় ২১ হাজার উপরে, জর্জিয়া ১৩ হাজারের উপরে, টেক্সাস ১৪হাজারের উপরে, কানেকটিকা ১৩ হাজারের উপরে।
উল্লেখযোগ্য নতুন মৃত্যুঃ আলোচিত শীষ রাজ্যগুলো
ওয়াশিংটন ১৮জন, কানেকটিকা ৪৮জন, কেলিফোর্নিয়া ৫১জন, মেসাজুসেট ৮৮জন, ইলিনইস ১৪জন , পেনসেলভেনিয়া ২৯জন, মিশিগান ৯৫জন, ফ্লোরিডা ৩৮জন, লুসিয়ানা ৪৪জন, জর্জিয়া ৩৮জন, টেক্সাস ৯জন।
আলোচিত রাজ্যে মোট মৃত্যুঃ
ওয়াশিংটন ৫২৩জন, কানেকটিকা ৬০২জন, কেলিফোর্নিয়া ৭২৫জন, মেসাজুসেট ৮৪৪জন, ইলিনইস ৭৯৪জন পেনসেলভেনিয়া ৫৯০জন,মিশিগান, ১৬০২জন, ফ্লোরিডা ৪৯৯জন, লুসিয়ানা ৮৮৪জন, জর্জিয়া ৪৮০জন, টেক্সাস ২৮৭জন।
আমেরিকাজুড়ে এখন শোকের ছায়া।লাশ গণকবর দেয়া হচ্ছে। ফিউনারেল, ট্রাক,লাশঘর, অস্থায়ী বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে মানুষের মরদেহ। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, আর্তনাদ আহাজারী। হাসপাতালে বাড়তি চাপ। নেই লাশ রাখার জায়গা।করোনা রোগীদের জন্য পযাপ্ত পৃথক ব্যবস্থা না থাকায় রোগী এবং স্বজনদের অভিযোগ বাড়ছে,বাড়ছে হতাশা-ক্ষোভ।
বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস এই দেশে ভয়াবহ আকার ধারন করছে ক্রমেই।
এদিকে বাংলাদেশীদের মধ্যে স্বজন হারানোর বেদনা আছে আছে অসুস্থ হওয়ার ভয়, পরিচিতজনের অসুস্থতা নিয়ে দূর্ভাবনা। এর বিপরীতে আর মাত্র দুদিন পর ১৫এপ্রিল থেকে টাকা প্রাপ্তির অপেক্ষা সবার মাঝে। আমেরিকার নাগরিকদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত ২ট্রিলিয়ন সহায়তা ঘোষনা স্বস্থি নিয়ে আসে করোনা মহামারীতে। ঘরে ঘরে অপেক্ষা বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশীরা রয়েছেন জনপ্রতি ১২শ ডলার,আর শিশুদের ৬শ ডলার সহায়তা গ্রহনের জন্য।
এদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৩৫০ বিলিয়ন ডলার ঘোষনা করা হয়েছে, এই সুবিধা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। এদিকে পেন্ডামিক আনএমপ্লয়মেন্ট সহায়তা পাবেন বাংলাদেশী প্রবাসীরাসহ সব ধরনের নাগরিক,পাবেন বেকার ভাতা।
এদিকে লাখ লাখ উদ্বিগ্ন কর্মহীন বাংলাদেশীরা ব্যস্থ আনএমপ্লয়মেন্ট আবেদন জমা দেয়ার কাজে। ইতিমধ্যে অনেকে জমা দিয়েছেন। সাপ্তাহিক কর্মহীন ভাতা পেয়েছেন কেউ কেউ। বিভিন্ন খাত থেকে ডলার পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন প্রবাসীরা।
Comments are closed.