• এপ্রিল ২৮, ২০২০
  • শীর্ষ খবর
  • 915
“এ মাসে ভাড়া না দিলে বাসা ছাড়তে হবে”

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ “মার্চ মাসের বাসা ভাড়া দিতে পারিনি প্রায় এক মাস কর্মহীন অবস্থায় রয়েছি, এরই মধ্যে এপ্রিল মাস চলে যাচ্ছে এ মাসে বাসা ভাড়া দিতে না পারলে ছাড়তে হবে বাসা, পরিবার নিয়ে নামতে হবে খোলা আকাশের নিচে। কথাগুলো বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট শহরের বসবাসকারী এক বিপণী বিতানের কর্মচারী”।

করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে, মার্চের ২৫ তারিখ থেকে সরকারী আদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তার পর থেকে বন্ধ রয়েছে চাকরি ব্যবসা বাণিজ্যসহ সবকিছু। এরই মধ্যে বিপাকে পরেছেন নগরে বসবাসকারী মধ্যবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্ত মানুষ। ঘরে রয়েছে খাদ্য সংকট তার এরই মধ্যে মরার উপর খরার ঘা বাসা ভাড়া যেন বাড়তি বিপদ।

করোনার এই দুর্যোগে অনেকেই বাসা ভাড়া মওকুফ করে দিচ্ছেন। আবার অনেকের ব্যাংক লোণে তোলা ঘর ভাড়া দিয়ে থাকেন, ব্যাংক লোণ স্থগি৯ত থাকলেও ভাড়া তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অনেক বাড়ি মালিক। অপরদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অসহায় মানুষদের বাড়ি ভাড়া মওকুফের আহবান জানান।

মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) কথা হয় এমন বেশ কয়েকজন স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী মানুষের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের।

নগরীর আল-মদিনা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, দীর্ঘ দিন থেকে কাজ বন্ধ থাকায় আধপেট খেয়ে জীবন ধারণ করছি। এদিকে বাসার মালিক চাপ দিচ্ছেন ভাড়ার জন্য, ভাড়া না দিতে পারলে বাসা ছাড়ার হুমকিও দিচ্ছেন। এ অবস্থায় যেন বেঁচে থাকার আশাটাই ছেড়ে দিতে হবে মনে হচ্ছে।

নগরের ফাজিলচিস্ত এলাকায় বসবাসকারী হাবিব আহমদ বলেন, গত দুমাস থেকে চাকরি হীন অবস্থায় রয়েছি। তার ওপর এখন সব কিছু বন্ধ গত মাসে বাসার মালিক জানিয়েছে কাজ থাক বা না থাক বাসার ভাড়া টাইম মতই দিতে হবে। ঘরে জমানো কিছু টাকা ছিল তা ইতিমধ্যে খরচ হয়ে গেছে এখন খাব কোথায় থেকে আর বাসা ভাড়া দিব কোথা থেকে থেকে।

সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাহি আহমেদ জানান, আমরার বেশ কয়েকজন মিলে পায়রা আবাসিক এলাকার একটি মেসে থাকি। মেস খরচ চলে আমাদের টিউশনির টাকা দিয়ে। সাধারণ ছুটির কারণে আমাদের টিউশনিও বন্ধ রয়েছে। এদিগকে মালিক তারা দিচ্ছেন ভাড়া দিতে। মওকুফের অনুরুধ করায় তিনি বলছেন যেখান থেকে পার এই মাসে টাকা দিয়ে আমার ঘর খালি করে দাও।

নগরীর দর্শন দেউড়ী এলাকার এক বাড়ি মালিক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য কামরুজ্জামান বলেন, আমার সংসার চলে বাসার টাকা দিয়েই তার উপর গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ ও পানির বিল দিতে হয়। তবুও এই পরিস্থিতিতে যারা ভাড়া দিতে অপারক তাদের চাপ দিচ্ছিনা। কয়েকজন ভাড়া দিয়েছেন তাই দিয়ে কোন রকম চলছি। সরকারের উচিত মালিক ও ভাড়াটিয়া উভয়ের দিকেই নজর রাখা।

সিলেটের নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল করিম কিম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়া ভাড়াটিয়াদের প্রতি বাড়ির মালিকদের মানবিক আচরণ করা উচিৎ। আবার অনেক বাড়ির মালিক বাড়ি ভাড়ার টাকায় নিজের পরিবারের খরচ নির্বাহ করেন ও ব্যাংক বা ব্যক্তিগত ঋণ পরিশোধ করেন। এই ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াদেরকে বাড়ির মালিক সম্পূর্ণ ভাড়া মওকুফ করে দেয়ার আবদার করার সুযোগ নেই। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পরিস্থিতি সবাইকে প্রস্তুতি ছাড়া মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় একের সমস্যা অন্যকে ছাড় দিয়ে সমাধান করার উপায় বেড় করতে হবে।