• এপ্রিল ২৯, ২০২০
  • শীর্ষ খবর
  • 570
সামাজিক দূরত্ব না মেনে হাওরে মন্ত্রী-এমপিদের কার্যক্রম

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জে বোরো ধান উৎপাদন, কৃষকদের মধ্যে কৃষিযন্ত্র বিতরণ এবং প্রধানমন্ত্রীর দেয়া কৃষকদের উপহার পৌঁছে দিতে এসেছিলেন দুইজন মন্ত্রী। কিন্তু তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই চালিয়েছেন কার্যক্রম। মন্ত্রীদের পাশাপাশি এমপিরাও মানেননি সামাজিক দূরত্ব। বর্তমানে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ থাকলেও তার কোনো কিছুই মানা হয়নি এখানে।

বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকালে সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ এলাকা থেকে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গাড়িবহর নিয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের পাশে সাংহাইর হাওরে ধানকাটা পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়াসেন গুপ্ত ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রীদের হাওরের ধানকাটা পরিদর্শন দেখতে আশপাশের বসতি থেকে লোকজন আসায় বেশ জনসমাগম হয়। তখন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়নি। এ অবস্থাতে কৃষিমন্ত্রী দুজন কৃষকের হাতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের চাবি তুলে দেন। হাওরে থাকা পুলিশ সদস্যরা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য বারবার হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিলেও উৎসুক জনতা তা মেনে চলেননি। ফলে সামাজিক দূরত্বের নিশ্চিতের বিষয়টি না মেনে উপস্থিত লোকজন একত্র হয়ে পড়েন।

এদিকে দায়িত্বশীলদের এমন কার্যক্রমে প্রতিবাদ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । ফেসবুকে ধানকাটার ছবি পোস্ট করে সাধারণ মানুষ সামাজিক দূরত্বে নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশনা থাকলেও এমন খামখেয়ালিপনা করা মোটেও ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন অনেকে।

সংবাদকর্মী আহমেদ মুজতবা রাজি তার ফেসবুকে লিখেছেন, আজ ভিআইপিদের জন্য ভিআইপি হাসপাতাল হচ্ছে বলেই আমাদের ভিআইপিরা এত সাহস দেখাতে পারছেন। ভুখা বাঙাল আমরা, যেহেতু স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা কম সেহেতু সামাজিক দূরত্ব আমরাই মেনে চলব। ভিআইপি সুবিধা থাকার পরও তারা আমাদের একটু সহমর্মিতা দেখিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারতেন। এতে আমরা আরও একটু সাহস পেতাম! যাক, যা হবার হবে। আল্লাহ সহায়।

আমেরিক প্রবাসী ইশতিয়াক রূপু আহমদে লিখেছেন, দুজন মন্ত্রীর আগমনে সুনামগঞ্জের কৃষককুল হয়তো খুবই খুশি। তবে ছোটখাটো যে রাজনৈতিক জমায়েত হয়েছে, তা এই সময় কাম্য ছিল না। মন্ত্রী যে আসনে সফর করেছেন শুধু সেই আসনের নেতৃবৃন্দ থাকলে কিছুটা হলে ও নিয়মরক্ষা হতো। দলের একজন মন্ত্রী সফরে এলে সকল এমপিকে দলবেঁধে লোক-লস্কর নিয়ে উপস্থিত থাকতে হবে এমন কোনো আইন সংবিধানে আছে কিনা জানতে চাই। একটু সাবধান হউন। আগামীতে এভাবে সদলবলে না এসে ডিজিটাল পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। জনগণ বেশ আতঙ্কে আছে মনে হলো। আপনার কী বলেন? আমি কি অন্যায় বলেছি? আমি কি কটু কথা বলেছি?

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই হাওরে কার্যক্রম পরিচালিত করেছি। কিন্তু উৎসুক জনতা মন্ত্রী মহোদয়দের দেখার জন্য এবং তাদের কথা শোনার জন্য ভিড় করেছিলেন। পুলিশ বারবার অনুরোধ করলেও বিষয়টি সামাল দিতে কষ্ট হয়েছে।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে হাওরে ধান কেটেছি কিন্তু জনগণ সে দূরত্ব রক্ষা করতে পারেননি। তারাও আমাদের সঙ্গে হাওরে ধান কাটতে চলে এসেছে। তারা যেভাবে পারছেন সেভাবেই ধান কাটতে এসেছেন।