- জুন ২২, ২০২০
- শীর্ষ খবর
- 543
আব্দাল মিয়া, বানিয়াচং প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে স্থানীয় মৌসুমি ফলের পাশাপাশি চলছে ফরমালিনযুক্ত মৌসুমি ফলের রমরমা ব্যবসা। এসব ফরমালিন যুক্ত রসালো ফল ক্রয় করে খেলে সব বয়সের মানুষের পেটের পীড়া থেকে শুরু করে মরনব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে।
জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে কলাসহ সব ধরনের ফল পাকানোর জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও রং ব্যবহার করা হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনারস ১২-১৫ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। কিন্তু ৫০০ পিপিএম, এনএনএ বা ১০০ পিপিএম জিএ-৩ দ্বারা শোধন করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৪১ দিন পর্যন্ত আনারসকে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এভাবে রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করে সব ধরনের ফলই স্বাভাবিক সময়ের পূর্বেই পাকানো হয়। মূলতঃ ইথাইলিন জাতীয় গ্যাস ও ইথরিল স্প্রে করে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে ফলমূল পাকানো হয়।
সরজমিনে উপজেলার প্রতিটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মধু মাস নামে খ্যাত জৈষ্ঠ্য মাসের শুরুতে উপজেলার সবকয়টি বাজারে বিভিন্ন স্পটে প্রকাশ্যে দিবালোকে মৌসুমি ফলের জমজমাট বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ফরমালিনযুক্ত মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, পেঁপে, মাল্টা, আপেল, আঙ্গুর সহ লাখ লাখ টাকার মৌসুমি ফল অবাধে বিক্রি হচ্ছে। ফল বাজারে লক্ষ্য করে দেখা গেছে, বাহির থেকে আম সুন্দর দেখা গেলেও ভেতরে পচন দেখা যায়। এসব আম খেয়ে মানুষ পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে অনেকে দাবি করেন।
স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, বর্তমানে প্রতিটি বাজারে যেসব মৌসুমি ফল বিক্রি হচ্ছে তার বেশিরভাগ ফলই ফরমালিনযুক্ত। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ভ্রমমাণ আদালত কিংবা স্বাস্থ্য পরিদর্শকের কোন ধরণের তদারকি নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সুযোগে অর্থলোভী ব্যবসায়ী চক্র অধিক মুনাফার জন্য কৌশলে বাজার গুলোতে বিক্রি করছে ফরমালিনযুক্ত মৌসুমি ফল। এ অবস্থায় অনেকটা নিরুপায় হয়ে ভোক্তা সাধারণ টাকা দিয়ে এখন কিনে খাচ্ছে বিষযুক্ত এসব ফল।
বাজারের কয়েকজন ফল ব্যবসায়ীর দাবী করেন, ফলে কোনও ধরনের ফরমালিন নেই। তারা সিলেট, শ্রীমঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমসহ বিভিন্ন প্রকারের মৌসুমি ফল ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করেন। তারা জানান, আড়তদাররা যদি ফলে ফরমালিন দিয়ে থাকেন তাহলে আমরা তা জানি না। শুধুমাত্র কিনে এনে বিক্রি করেন বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
ফল ব্যবসায়ী আলী মিয়া বলেন, আমরা ফলে কোন রকম ফরমালিন বা মেডিসিন দেই না। আড়তদাররা আমাদেরকে বলে ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে ফল বিক্রি করবা। বলবা ফলে কোন রকমের মেডিসিন নেই। বিভিন্ন জাতের মৌসুমি ফল দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ক্রয় করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। আড়তদাররা যদি ফলে ফরমালিন মেশায় তাহলে আমাদের জানা নেই।
গ্যানিংগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী মো. লুৎফুর রহমান সাধারণ ক্রেতা হিসেবে জানান, বাজার থেকে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ফরমালিনযুক্ত মৌসুমি ফল ক্রয় করে নিজের পরিবারে মরণব্যাধি ক্রয় করার সমান। একজন অসুস্থ রোগীর জন্য ফলের খোসা চাকচিক্য দেখে আফসোস করে ফল নিলে দেখা যায় ভিতরে তার ব্যতিক্রম। এজন্য আমি বাজার থেকে কোন ধরণের ফল ক্রয় করিনি। এসব ফল খেয়ে সাধারণ মানুষ তাৎক্ষণিক অসুস্থ না হলেও পরে অবশ্যই অসুস্থ হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহপরান প্রতিবেদককে জানান, বাজারে বিক্রি করা ফরমালিনযুক্ত মৌসুমি ফল মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পরীক্ষা ছাড়া এসব ফল খেলে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন ধরণের জটিল রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই জনস্বার্থে স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ক্রেতা সাধারণকে ফল ক্রয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা প্রতিবেদককে জানান, বানিয়াচংয়ে মৌসুমি ফলে যদি কেউ ফরমালিন নামক কোন দ্রব্য মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করে আর সেটা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন সর্বক্ষণ তৎপর থাকবে। নতুন ইউএনও হিসেবে বানিয়াচংয়ের সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা কামনা করছেন।