• আগস্ট ১৯, ২০২০
  • জাতীয়
  • 392
ভারতের ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার পাবে বাংলাদেশ: শ্রিংলা

নিউজ ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি পর্বে রয়েছে ভারত। এরই মধ্যে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে রয়েছে। ভারতে এই ভ্যাকসিন উৎপাদিত হলে তাতে অগ্রাধিকার পাবে বাংলাদেশ।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন। দুই দিনের ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সভা করেন। আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘ভ্যাকসিন উৎপাদনের পর অগ্রাধিকার পাওয়া দেশের তালিকায় থাকবে বাংলাদেশ। কেননা, বাংলাদেশ আমাদের কাছে সব সময় অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা একটি দেশ। তিনি আরও জানান, ভারতের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের কাজ চলছে। ভারত ব্যাপক আকারে এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘কোভিড-১৯–এর সময়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে আমাদের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কোভিড মোকাবিলার অংশ হিসেবে ভারতে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে। আমরা বলেছি ওই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত। ভারত এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে জানিয়েছে, সে দেশে যে ভ্যাকসিন উৎপাদিত হবে, তা শুধু ভারতের জন্যই নয়, আমাদেরও দেওয়া হবে। ভারতের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা ভারতের সহযোগিতা চেয়েছি।’ তিনি আরও জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর্বে দুই দেশের মধ্যে যেসব ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার পর্যালোচনা হয়েছে বেনাপোল-পেট্রাপোলে যেভাবে আটকে গিয়েছিল, সেই জায়গাতে ট্রেনের মাধ্যমে পণ্য চলাচলে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আস্তে আস্তে স্থলপথ খুলে দেওয়া হয়েছে। ট্রান্সশিপমেন্টের পরীক্ষামূলক চলাচল হয়েছে, যা ইতিবাচক।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র আছে যেমন ঋণচুক্তি, বিদ্যুৎ খাত, অবকাঠামো খাত। এগুলোর কিছু কাজ থেমে গিয়েছিল। এখানে যে ভারতের লোকগুলো কাজ করছিল, সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু এখন আবার ভারতের লোকজনের আসা শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এয়ার বাবলের প্রস্তাব দিয়েছি। এটি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে এবং আশা করছি এটি আমরা দ্রুত করে ফেলতে পারব। এ ক্ষেত্রে সুবিধা হবে যে প্রচুর বাংলাদেশি ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিল, তাদের যাতায়াত শুরু হবে। ভারতের অনেক বিশেষজ্ঞও আসার সুযোগটা পাবেন। এসব বিবেচনায় এনে এয়ার বাবল দ্রুত শুরু হতে পারে।’ তিনি আরও জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) সভা দ্রুত আয়োজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটির একটি ভালো দিক হচ্ছে বিভিন্ন লাইন মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা যাবে। এতে ওই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন আরও দ্রুত হবে। দুই দেশের সুবিধা অনুযায়ী এই বৈঠক হবে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের যেসব অস্বস্তির বিষয় আছে, তা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমরা সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আগামী মাসে আমরা চেষ্টা করব বিজিবি এবং বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক আয়োজনের। ওই বৈঠকের আগে তিনি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা আমরা পরিহার করতে পারি। অতীতের বিভিন্ন বিভিন্ন সময়ের তুলনায় এ বছর প্রথম সাত মাসে সংখ্যাটি বেড়ে গেছে এবং এ বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। তা ছাড়া ভারতে কিছু জায়গায় বাংলাদেশিরা আটকে আছে। পশ্চিমবঙ্গের ধুবরি এলাকায় ২৬ জন জেলে আটকে আছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব আশ্বস্ত করেছেন ওই লোকজন যাতে দ্রুত দেশে ফিরতে পারে, সে জন্য তিনি সহযোগিতা করবেন। তাবলিগ জামাতের কিছু লোক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসেছেন এবং আরও শতাধিক লোক এখনো ভারতে রয়ে গেছেন। তাঁদের ফেরত আনার বিষয়টি চলমান রয়েছে।’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ভারত নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করবে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি আমাদের জন্য উদ্বেগের। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাশের জন্য অনেক চেষ্টা করে এসেছি। নিরাপত্তা পরিষদের কয়েক স্থায়ী সদস্যের বিরোধিতার কারণে এটি হয়নি। আমরা ভারতের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। এক দিকে ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের ভালো সম্পর্ক আছে। অবকাঠামোসহ বেশ কিছু জিনিস তৈরি করে দিচ্ছেন রোহিঙ্গাদের জন্য। এগুলো যেন অব্যাহত থাকে, প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য মিয়ানমারকে চাপ দেয় এবং নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনায় যেন আমাদের সহযোগিতা করে সে জন্য ভারতকে বলেছি।’ তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠান কোভিডের কারণে কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। বছরের বাকি সময়ে কীভাবে এটি এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা করেছে দুই পক্ষ। জাতিসংঘ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন রাজধানীতে এ অনুষ্ঠান আয়োজনে ভারত সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছে।