- নভেম্বর ৩, ২০২০
- শীর্ষ খবর
- 381
নিউজ ডেস্কঃ সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র নেতৃবৃন্দ ও সিলেটের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ‘ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চেম্বার কনফারেন্স হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েবের সভাপতিত্বে সভায় সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট শহরকে পরিচ্ছন্ন, আধুনিক ও একটি পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সিলেটের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীগণের সাথে আলাপ হয়েছে এবং তাদেরকে সম্প্রতি সিলেট সফরের আহবান জানিয়েছি। বিশেষ করে শহরের রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে আমরা যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সচেতনতা ও সকল মহলের সহযোগিতার অভাবে সফল হতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমরা যখন রাস্তায় অভিযান করি তখন হকাররা চলে যায়, কিন্তু আমরা সরে যাওয়ার পরপরই তারা আবার স্বস্থানে ফিরে আসে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।
মেয়র বলেন, কোর্ট পয়েন্ট ও জিন্দাবাজার এলাকায় সবসময়ই হকারদের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করতে দেখা যায়, কিন্তু পাশেই রয়েছে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। পুলিশ প্রশাসন চাইলে হকারদের ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, হকারদের সাথে আলোচনাক্রমে আমরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে তাদের বসার সুযোগ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু তারা দিন দিন যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং আমাদের তৎপরতার বিরুদ্ধে মিছিল, মানববন্ধন করছে তাতে আগামীতে এসব হকারদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
তাই তিনি এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকবৃন্দ সহ সকলের পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় ব্যবসায়ীগণ ফুটপাত দখলকারী হকারদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করে সরকারের ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করি। কিন্তু হকারদের দৌরাত্মে লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। পাশাপাশি ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে রাখায় সাধারণ পথচারী ও নগরবাসীরাও অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, চেম্বারের নেতৃত্বে ইতোপূর্বে আমরা অনেকবার হকারদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু বিষয়টির স্থায়ী কোনো সমাধান এখনও হয়নি। তারা বলেন, হকারদের দৌরাত্ম্যের নেপথ্যে কারা রয়েছে সেসব ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।
ব্যবসায়ীগণ ফুটপাত দখলমুক্তকরণে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উদ্যোগের বিরুদ্ধে সম্প্রতি হকারদের মিছিলের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা মেয়র মহোদয়ের ডাকে যেকোন সময় সাড়া দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে হকারদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামবেন। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ হকারদের প্রশ্রয়দাতা, অসাধু ও স্বার্থন্বেষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার আহবান জানান। হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে শুক্রবারে হলিডে মার্কেট চালু করা যেতে পারে বলে বক্তাগণ মত প্রকাশ করেন।
সভায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। ঘুষখোর এবং দুর্নীতিবাজরা যে দলেরই হোক না কোন তারা সমাজের শত্রু, জাতির শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, হকারদেরকে দুয়েকদিনে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদেরকে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। শহরের কোলাহলমুক্ত কিছু রাস্তায় তাদেরকে পুনর্বাসন করা যেতে পারে এবং আমরা সেখানে তাদের কাছ থেকে পণ্য সামগ্রী কিনতে পারি। তিনি বলেন, সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন সিলেটের জনসাধারণের যেকোন সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত আন্তরিক। আজকের সভায় আলোচিত ফুটপাত দখলমুক্তকরণের বিষয় নিয়ে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আলোচনার আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ এর নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনারের সাথেও আলোচনা করবেন বলে জানান।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট এ. টি. এম. ফয়েজ বলেন, ফুটপাত দখলমুক্তকরণে মেয়র মহোদয়ের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীদের আর্থিক দিক বিবেচনায় এসব হকারদের যত্রতত্র বসতে দেওয়া উচিত নয়। এক্ষেত্রে তিনি তাদের অস্থায়ী দোকানগুলোর অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার প্রস্তাব জানান। তিনি এসব অবৈধ হকারদের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে মাননীয় আদালতে দায়েরকৃত মামলার ফলোআপ নিবেন বলে জানান। এছাড়াও তিনি এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের যেকোন আইনী সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ব্যবসায়ীদের সকল ধরণের দাবী-দাওয়া সিলেট চেম্বারের অতীতের মত ভবিষ্যতেও ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবে। তিনি ফুটপাত হকারমুক্তকরণে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এবিষয়ে নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনারের সাথে আলোচনার জন্য সিলেট চেম্বার, মেট্রোপলিটন চেম্বার, বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করলে উপস্থিত সকলেই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। চেম্বার সভাপতি ফুটপাত দখলমুক্ত করণে সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সিলেট চেম্বারের সহ সভাপতি তাহমিন আহমদ, পরিচালক মোঃ মামুন কিবরিয়া সুমন, পিন্টু চক্রবর্তী, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, মোঃ আব্দুর রহমান (জামিল), হুমায়ুন আহমেদ, আলীমুল এহছান চৌধুরী, মোঃ আমিনুজ্জামান জোয়াহির, খন্দকার ইসরার আহমদ রকী, ফখর উস সালেহীন নাহিয়ান, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. মোঃ ফজলুল হক সেলিম, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ মোঃ রেনু, সাবেক সভাপতি আহমেদ নূর ও ইকরামুল কবির, জেলা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী শাহ্ দিদার আলম নোবেল, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল, ব্যবসায়ী নেতা শেখ মোঃ মকন মিয়া, মোঃ আব্দুর রহমান রিপন, মোঃ নজমুল ইসলাম, মোঃ আলা মিয়া, হোসেন আহমদ, নিয়াজ মোঃ আজিজুল করিম, আব্দুল হাদী পাবেল, আব্দুস সামাদ তোহেল বিভিন্ন মার্কেট এবং ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।