- জানুয়ারি ১৭, ২০২১
- শীর্ষ খবর
- 289
নিউজ ডেস্কঃ সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ রোববার সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত সব আসামির উপস্থিতিতে শুনানি শেষে বিচারক মোহিতুল হক চৌধুরী অভিযোগ গঠন করেন।
২৪ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। এদিন মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) রাশিদা সাঈদা খানম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাশিদা সাঈদা বলেন, অপহরণ, গণধর্ষণ ও গণধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলার আটজন আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ধর্ষণ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হলো।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আটজন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি ও রবিউল হাসানের অব্যাহতি চেয়ে অভিযোগপত্রে ডিসচার্জ পিটিশন দাখিল করলে শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি নামঞ্জুর করেন। মামলার অপর আসামি অর্জুন লস্কর ও মাহবুবুর রহমানের পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। এই আবেদনেরও শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। এরপর আদালতে অভিযোগ গঠন হয়। এ সময় আসামিরা কাঠগড়ায় থেকে নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়। আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা নিয়ে প্রথম শুনানি হয় ৩ জানুয়ারি। ওই দিন বাদীপক্ষ অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় সময় প্রার্থনা করলে আদালত মঞ্জুর করেন। ১০ জানুয়ারি বাদীপক্ষের আইনজীবী অভিযোগপত্র পর্যালোচনার জন্য আবেদন করে সময় চাইলে আদালত দুই দিনের সময় নির্ধারণ করে দেন।
বাদীপক্ষের আবেদনে অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করার জন্য আদালতে জমা দেওয়া বেশ কিছু নথি চাওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল মামলার অভিযোগপত্র, সিজার লিস্ট, জিম্মানামা, স্কেচ, ইনডেক্স, ইনডেক্সের সূচি ও ব্যাখ্যা, মেডিকেল ও ডিএনএ রিপোর্ট, আসামিদের দোষ স্বীকারমূলক জবানবন্দি, ২২ ধারার জবানবন্দি, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ও আসামিদের রিমান্ড আবেদনের কপি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলার সব নথিপত্র হস্তান্তর হলে পর্যালোচনায় কোনো ত্রুটি পাননি তাঁরা। ১২ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ ধার্য হয়।
গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক তরুণীকে (২০) দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী বাদী হয়ে মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন।
ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে গেলেও তিন দিনের মধ্যে ছয় আসামি ও সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র্যাব। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরবর্তী সময়ে সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। আসামিদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়।
মামলার অভিযোগপত্রে ঘটনার পর আসামিদের পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন পর্যায় প্রত্যক্ষ করা দুজনসহ ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।
অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম ওরফে রাজনকে দল বেঁধে ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। আসামি রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুমকে ধর্ষণে সহায়তা করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। আট আসামিই বর্তমানে কারাগারে আছেন। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিতি।