- জানুয়ারি ২৭, ২০২১
- শীর্ষ খবর
- 273
নিউজ ডেস্কঃ সিলেট ছাত্রলীগের কমিটি একাধিকবার বিলুপ্ত হয়েছে। নেপথ্যে ছিল— চাঁদাবাজি, টেন্ডার লুট, খুনাখুনি ও হামলার ঘটনা।
সবশেষ ২০১৭ সালে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হয়েছিল নিজ সংগঠনের কর্মী খুনের দায়ে। সেই বৃত্তে এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে ছাত্রলীগ।
চাঁদাবাজি ও খুনাখুনির পর এবার ধর্ষণকাণ্ডের মতো অপরাধ এবং মাদকের সেবনের কালো পথেও জড়িত সিলেট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসব হচ্ছে কেবল নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে।
২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পেরিয়েছে। তিন বছরের অধিককাল কমিটিহীন থাকার পরও শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি সিলেট ছাত্রলীগের। ২০২১ সালে এসেও বিচ্ছিন্নভাবে পথ চলছে ক্ষমতাসীন দলের এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একের পর এক অপরাধে জড়াচ্ছে ছাত্রলীগ। সবশেষ গত বছরের শেষ দিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় সংগঠনটির ইমেজ সংকট তলানিতে পৌঁছেছে।
সংগঠনের সাবেক দায়িত্বশীলরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। সংগঠনের নেতাকর্মীদের জবাবদিহিতা না থাকার কারণে অপরাধ কর্মে জড়াচ্ছেন।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ বলেন, ছাত্রলীগ এখন ছন্নছাড়া। কমিটি না থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি হয়। অনেবে গ্রুপ, উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়েছেন। অনেকে অপরাধে জড়াচ্ছেন। কমিটি থাকলে এরকম হতো না। সঠিক নেতৃত্ব না থাকার কারণে এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কমিটি না থাকায় কেউ দায়ভার নিতে চায় না।
তিনি বলেন, কমিটি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ করেছি। আশা করি, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী নেতৃত্বে যারা আসবেন, তারা সংগঠনকে আরও সুদৃঢ় করবেন।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এমদাদ রহমান বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব এখন অছাত্রদের হাতে চলে গেছে। কমিটি গঠনে নেত্রীর নির্দেশনা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। অনেকে প্রত্যাশিত নেতৃত্বে আসার বয়স পার হয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ স্বাবলম্বী হতে পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। কিছু নেতাকর্মী ছাত্রলীগ ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছেন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগে। উপজেলা পর্যায়েও বিবাহিত ও অছাত্ররা কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কমিটি থাকলে কেউ অপরাধ কর্মে জড়ানোর সাহস পেতো না।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান বলেন, কমিটি না থাকা সত্ত্বেও আমরা স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমরা আশাবাদী দ্রুত কমিটি দেওয়ার মাধ্যমে সিলেট ছাত্রলীগকে সুগঠিত করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন অপরাধের কারণে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বহুবার বিলুপ্ত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সবশেষ শাহরিয়ার আলম সামাদকে সভাপতি ও এম. রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৫ সালে ১৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর থেকেই প্রকাশ্যে দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে সংঘাতে জড়ান নেতাকর্মীরা। মাত্র চার মাসের মাথায় ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্র।
কমিটি স্থগিত হওয়ার পর বেশকিছু দিন শান্ত ছিল জেলা ছাত্রলীগ। ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর কমিটির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলন আয়োজনের জন্য তারিখ নির্ধারণে নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। কিন্তু সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয় সামাদ-রায়হানের নেতৃত্বাধীন কমিটি। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ছাত্রলীগকর্মী ওমর মিয়াদ হত্যা মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম. রায়হান চৌধুরী প্রধান আসামি হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্র।
সেই সঙ্গে নতুন কমিটি গঠনের জন্য ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদে জীববৃত্তান্ত আহ্বান করা হলেও কমিটি গঠন করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
২০১৫ সালের ২০ জুলাই আব্দুল বাছিত রুম্মানকে সভাপতি ও আব্দুল আলীম তুষারকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রায় সাড়ে ৩ বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা এবং নানা অভিযোগে গত বছরের ২১ অক্টোবর বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এর আগে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করার দায়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পঙ্কজ পুরকায়স্থকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর ২২ জানুয়ারি সিনিয়র সহ-সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু নিপুর নেতৃত্বে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নগরের কোর্ট পয়েন্টে সিপিবির সমাবেশে হামলা করে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় হিরণ মাহমুদ নিপুকেও বহিষ্কার করা হয়।
সবশেষ ২০১৪ সালে নতুন কমিটি দিলেও তিন বছরের মাথায় ২০১৭ সালে সেই কমিটি বিলুপ্ত করা হয় সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরী নিজ দলের কর্মীকে খুনের ঘটনায়। এরপর দীর্ঘদিন কমিটি আলোর মুখ না দেখায় ছাত্রলীগের পরিচয় দানকারী নেতাকর্মীরা জড়াচ্ছেন বিভিন্ন অপরাধে।
সূত্র: বাংলানিউজ