- মার্চ ৮, ২০২১
- লিড নিউস
- 272
নিউজ ডেস্কঃ সিলেটে ছাত্রদল নেতা ফয়জুল হক ওরফে রাজুকে কুপিয়ে হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন আবারও পিছিয়েছে। আজ সোমবার সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আলোচিত এই মামলার অভিযোগ গঠনের নির্ধারিত তারিখ ছিল। মামলার এক আসামি ‘অসুস্থ’ থাকায় অভিযোগ গঠন পিছিয়ে আগামী ২৫ মার্চ নতুন তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের নির্ধারিত তারিখ ছিল। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মোর্শেদ নামের এক আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার কারণে অভিযোগ গঠন পিছিয়ে ৮ মার্চ ধার্য করা হয়েছিল।
আজ সোমবারও তিনি ‘অসুস্থ’ বলে আদালতকে জানানো হয়। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের তারিখে রুবেল আহমদ নামের এক আসামি অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় তাঁকে আদালতে হাজির না করায় ওই তারিখেও অভিযোগ গঠন পিছিয়েছিল।
ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সরওয়ার আহমদ চৌধুরী বলেন, সোমবার এই মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে এক আসামি অসুস্থ থাকার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ জানানোয় অভিযোগ গঠন পিছিয়েছে।
অভিযোগ গঠনের নির্ধারিত দিনে এক আসামির দুই দফায় ‘অসুস্থ’ হওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। তাঁরা বলছেন, শুধু অভিযোগ গঠনের দিন শোনা যায় আসামি অসুস্থ।
বাদীপক্ষের আইনজীবী গোলজার হোসেন খোকন বলেন, আগামী তারিখে যদি এ রকম অসুস্থ থাকা বা অন্য কোনো কারণ দেখানো হয়, তখন এ বিষয়ে লিখিতভাবে আদালতকে অবহিত করে প্রতিকার চাওয়া হবে। পাশাপাশি কারা কর্তৃপক্ষের কাছেও লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হবে। ওই আইনজীবী বলেন, ‘অভিযোগ গঠনের দিন হাজতি আসামিদের আদালতে হাজির রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের হাজির থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে। আসামিদের আদালতে হাজির না হওয়ায় এই নিয়ে তিনবার অভিযোগ গঠন পেছানোয় এবং দুবার একজন আসামি অসুস্থ থাকার বিষয়টি সন্দেহজনক। আসামিরা সবাই ইয়ং ও এনার্জিটিক। এঁরা যদি বয়স্ক হতেন, তাহলে না হয় একাধিকবার অসুস্থ থাকার বিষয়টি মানা যেত। কিন্তু আমরা এখন সন্দেহ করছি।’
সিলেট ল কলেজের শিক্ষার্থী ফয়জুল হক সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহপ্রচার সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার শাহাপুরে। সিলেট নগরীতে এক চাচার বাসায় থাকতেন তিনি। ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচিত ঘোষণার পর রাতে বিজয় মিছিল হয়। বিজয় মিছিল শেষে সেখান থেকে ডেকে নিয়ে রাত নয়টার দিকে একদল অস্ত্রধারী তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত ফয়জুলের চাচা দবির আলী বাদী হয়ে ওই বছরের ১৩ আগস্ট সিলেট কোতোয়ালি থানায় জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনারসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১২ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অনুপ কুমার চৌধুরী আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সেখানে ওই সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সদস্য পদে থাকা আবদুর রকিব চৌধুরী, জেলা সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনারসহ ২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন দেলোয়ার হোসেনসহ তিনজন। প্রধান আসামি আবদুর রকিব চৌধুরীসহ বাকি আসামিরা পলাতক।
ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হলেও অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায় প্রায় দেড় বছর ধরে আছেন বলে জানিয়েছেন ফয়জুলের চাচা ও মামলার বাদী দবির আলী। তিনি বলেন, ‘প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার মতো একটি বর্বর ঘটনা ঘটিয়ে প্রধান আসামি আবদুর রকিব পালিয়ে এখন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। আমরা শুনেছি, যুক্তরাজ্য থেকে প্রধান আসামি রকিব বিভিন্নভাবে মামলাটির বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টায় আছেন। এ অবস্থায় বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে কি না, এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’
পরপর দুবার এক আসামির অসুস্থ থাকা প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী বলেন, কোনো আসামি অসুস্থ থাকলে কারা কর্তৃপক্ষ অসুস্থতার প্রতিবেদনসহ লিখিতভাবে আদালতকে অবহিত করে। এবারও লিখিতভাবে অবহিত করেছে। এখন সত্যি অসুস্থ, না অন্য কিছু—এ বিষয়ে তাঁদের বিশেষ কিছু বলার থাকে না।