- মার্চ ২৩, ২০২১
- জাতীয়
- 311
নিউজ ডেস্কঃ কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলে ৭৬ কেজি বোমা পুতে রাখার ঘটনায় হওয়া ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ১৪ আসামির মৃত্যুদণ্ড ফায়ারিং স্কোয়াডে কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই রায় দেন।
রায়ে আদালত বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ১২১/৩৪/১০৯ ধারার অপরাধজনক মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হলো। একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে আসামিদের প্রকাশ্যে প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।
তবে ফায়ারিং স্কোয়াডে দণ্ড কার্যকর করা না গেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশও দেন আদালত। আদালত বলেন, নির্দেশ মোতাবেক তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে কর্তৃপক্ষের কোনো অসুবিধার কারণ থাকলে প্রচলিত নিয়মানুসারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
তাদের দণ্ডবিধির ১২১/৩৪/১০৯ ধারায় চরম দণ্ড প্রদান করায় দণ্ডবিধির ১২১ক/১২২/১২৪ক ধারা মতে কোনো দণ্ড প্রদান করা হয়নি।
রায়ের পর্যবেক্ষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার প্রসঙ্গও উঠে আসে। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসলে ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্নভাবে তাকে ২০ বার হত্যা চেষ্টায় লিপ্ত হয়।
আসামিদের জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, মুফতি হান্নানের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী ২০০০ সালের জুলাই মাসে হুজি-বির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বৈধ সরকারকে উৎখাত করার জন্য শেখ হানিাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা। ওই বছরের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলে হেলিপ্যাডের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। বরাবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে হুজি- প্রথম ঘটনা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ২০০০ সালের ২০ জুলাই, দ্বিতীয় ঘটনা খুলনায় ২০০১ সালের ৩০ মে, তৃতীয় ঘটনা সিলেটে ২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এবং চতুর্থ ঘটনা ঢাকায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। এই কারণে হুজি ও জেএমবিসহ আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে উল্লেখিত ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে বলে অত্র ট্রাইব্যুনাল মনে করেন।
এমতাবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হলো। বিবেচ্য বিষয়সমূহ ওপরের আলোচনার আলোকে নিষ্পত্তি করা হলো।
রায় ঘোষণার সময় হাজতি ৯ আসামিকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়। আর পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুরও আদেশ দেন আদালত।
আদালত রায়ে বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা ইচ্ছা করলে রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন-২০০২ এর ১৪ ধারা অনুসারে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে পারবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক প্রদত্ত দণ্ড অনুমোদনের জন্য অবিলম্বে রায়সহ নথি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে প্রেরণ করা হোক।
মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আজিজুল হক ওরফে শাহনেওয়াজ, লোকমান, ইউসুফ ওরফে মোছহাব মোড়ল, মোছাহেব হাসান ওরফে রাশু, শেখ মো. এনামুল হক, মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ, মাহমুদ আজাহার ওরফে মামুনুর রশিদ, রাশেদুজ্জামান ওরফে শিমুল খান, তারেক, ওয়াদুদ শেখ ওরফে গাজী খান, আনিসুল ইসলাম, সারোয়ার হোসেন মিয়া, মাওলানা আমিরুল ইসলাম ওরফে জেন্নাত মুন্সী ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। আসামিদের মধ্যে আজিজুল হক, লোকমান, ইউসুফ, এনামুল হক ও মোছাহেব হাসান পলাতক।
হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান এই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হলেও অন্য মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা রায়ের পর বলেন, দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই রায় হলো। সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আশা করছি উচ্চ আদালতেও এই দণ্ড বহাল থাকবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজের মাঠে ২০০০ সালের ২১ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। ওই মাঠেই পরদিন শেখ হাসিনার সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
এ ঘটনায় হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহ এবং বিস্ফোরক আইনে মোট তিনটি মামলা হয়। এরমধ্যে ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর সিআইডির সাবেক এএসপি আব্দুল কাহার আকন্দ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
এই ঘটনায় হওয়া হত্যাচেষ্টা মামলায় ২০১৭ সালের ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টও আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।