• মার্চ ২৮, ২০২১
  • শীর্ষ খবর
  • 388
সিলেটে হরতাল শেষে ঘরে ফিরলেন হেফাজত নেতাকর্মীরা

নিউজ ডেস্কঃ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্র ঘোষিত সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সিলেটে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়াই পালিত হয়েছে। দিনভর মিছিল-পিকেটিং শেষে রোববার (২৮ মার্চ) বিকেলে আছরের নামাজের আগে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ করে রাস্তা ছেড়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর হেফাজতের নেতাকর্মীরা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে শুক্রবার (২৬ মার্চ) ঢাকা ও চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে হেফাজত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটে। এর প্রতিবাদে রোববার (২৮ মার্চ) সিলেটসহ সারা দেশে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতালের ডাক দেয় হেফাজত।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে রোববার ফজরের নামাজের পর থেকেই সিলেটে রাস্তায় নামেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ভোর থেকে তারা মহানগরীর বিভিন্ন রাস্তায় পিকেটিং শুরু করেন এবং পথে পথে চলা যানবাহন আটকে দেন। নেতাকর্মীরা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে ইট বিছিয়ে এবং কাগজ জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে পিকেটিং করেন।

এদিকে, হরতালের কারণে রোববার সকালে সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। সিলেটের আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও বাস এবং যাত্রীবাহী গাড়িসহ চলাচল করেনি কোনো ধরনের যানবাহন। নগরীতে কিছু সংখ্যক রিকশা ও শহরতলি এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। তবে রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৫-২০ টি মোটরসাইকেলযোগে পুরো নগরীতে ঘুরে ঘুরে হেফাজত নেতাকর্মীদের পিকেটিং করতে দেখা যায়।

দুপুর ১২টার দিকে নগরীর বন্দরবাজারে হেফাজত ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এবং শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও তিন দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ৫ জন আহত ও ৫ জন আটক হন। আহতদের মধ্যে দুজন ছাত্রলীগ কর্মী।

জানা যায়, দুপুর ১২টার দিকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জেলা পরিষদের সামনে থেকে হরতালবিরোধী মিছিল নিয়ে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল নিয়ে আবারও বন্দরবাজারস্থ কামরান চত্বরে এসে জড়ো হন।

এসময় সিলেট বিভাগীয় ডাকঘরের সামনে হাটতে থাকা কয়েকজন হেফাজত নেতাকর্মীকে দেখে ছাত্রলীগ ধাওয়া দেয়। তখন হেফাজত নেতাকর্মীরা দৌঁড়ে করিম উল্লাহ মার্কেটেরে বিপরীত দিকের গলিতে ঢুকে পড়েন। পরে সে গলি থেকে হঠাৎ কয়েকজন শ্রমিক ও হেফাজত কর্মী বেরিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে কামরান চত্বরের দিকে নিয়ে যান। পরে ছাত্রলীগ আবারও সংঘবদ্ধ হয়ে হেফাজত নেতাকর্মী এবং শ্রমিকদের ধাওয়া করলে সংঘর্ষ বাধে। এসময় ছাত্রদলীগের নেতাকর্মীরা অন্তত: ১৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় ৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুজন ছাত্রলীগ কর্মী।

পরে হেফাজত নেতাকর্মী ও শ্রমিকারা পুলিশের দিকে ইট-পাটকের ছুড়লে পুলিশ ৫ কিশোরকে আটক করে। আটকের বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাম্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের।

আটকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, রোববার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে আবারও জড়োন হন হেফাজত নেতাকর্মীরা। এসময় তারা সমাবেশ করেন। সমাবেশে হেফাজতের সিলেট জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারা বলেন, কেন্দ্র থেকে যে কোনো নির্দেশনা আসলে ঈমানি চেতনায় তা পালনে আমরা রাস্তায় নেমে পড়বো।

হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় নায়বে আমির ও সিলেট জেলার সভাপতি মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ির সভাপতিত্বে ও জামেয়া মাদানীয়া কাজিরবাজারের প্রিন্সিপাল হেফাজত নেতা মাওলানা সামিউর রহমান মুসার পরিচালনায় সমাবেশে নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন- হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, জেলা হেফাজত নেতা মাওলানা ফয়জুল হাসান কাদিমানী, মহানগর হেফাজত নেতা মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, জেলা হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল হোসাইন, মহানগর হেফাজত নেতা মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা আতিকুর রহমান, মাওলানা মুহিবুর রহমান, মাওলানা এমরান আলম, মাওলানা সৈয়দ সলিম ক্বাসেমী, মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, মাওলানা নজমুদ্দিন ক্বাসেমী, মাওলানা মাহমুদ শুয়াইব, মাওলানা মুহিব্বুল হক, মাওলানা ছদরুল আমীন, মাওলানা আখতারুজ্জামান তালুকদার, মাওলানা মুশফিকুর রহমান মামুন, মাওলানা ফাহাদ আমান, মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী, মাওলানা আমিন আহমদ রাজু, আসলাম রাহমানী, মাওলানা হাফিজ কবির আহমদ, মাওলানা হারুন রশিদ, মাওলানা লুৎফুর রহমান, আবু সুফিয়ান, আবু বক্কর সিদ্দিক, আবুল খয়ের, আব্দুল করিম দিলদার ও মাওলানা একরামুল হক জুনেদ।

শেষে বিকেল পৌনে ৫টায় দোয়ার মাধ্যমে হেফাজতের সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।