- এপ্রিল ১৯, ২০২১
- জাতীয়
- 362
নিউজ ডেস্কঃ চলমান লকডাউন ঈদের আগেই শিথিল করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের রংপুর জোনের চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী এ কথা জানান। রংপুর সড়ক জনপথ ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সেতুমন্ত্রী ঢাকা থেকে যুক্ত ছিলেন।
তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ চলছে। দ্বিতীয় তরঙ্গ মোকাবিলায় এখন সারাদেশে লকডাউন চলছে। এই লকডাউন এক সপ্তাহ শেষ হতে চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর ব্যাপারে সরকার সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে ঈদের আগে লকডাউন শিথিল করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ঈদের আগে লকডাউন শিথিল করা হবে জীবন ও জীবিকার এবং ঈদ পূর্ববর্তী কেনাকাটার জন্য। মানুষের ঈদের সময় ঘরমুখী যাতায়াতের জন্য লকডাউন শিথিল হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই চিন্তা ভাবনা করছেন। সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে, করোনা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা কেউ জানে না।
মন্ত্রী আরও বলেন, করোনার কারণে অনেকেই জীবিকার কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে রয়েছেন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ, তারা কষ্ট পাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবহন শ্রমিকসহ বেকার কর্মহীন শ্রমিকদের ব্যাপারে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভাসমান মানুষদেরও ত্রাণ দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন এসব দেখাশুনা করবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে এই দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে থাকতে বলা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমানে করোনা মোকাবিলায় আমাদের আত্মতৃপ্তির কোনো কারণ নেই। যেকোনো সময় এই সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেশে করোনা সংক্রমণের নতুন নতুন ভয়ংকর মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। নতুন নতুন ভেরিয়েন্টের সংযোজন হচ্ছে। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরলেই সমস্যার অনেক সমাধান সম্ভব। কিন্তু লোকজন ঠিকমতো মাস্ক পরছে না। লোক দেখানো মাস্ক পরা বন্ধ করে সঠিক নিয়মে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। পুলিশের ভয়ে নয়, জীবন-জীবিকার তাগিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়ম অনুযায়ী চলাফেরা করা উচিত। আমাদের অসচেতনতা, অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে করোনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। প্রতিদিন মৃত্যুর হার বাড়ছে, বাড়ছে সংক্রমণের হার।
সড়ক ও জনপদের প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকারের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা আমাদের মেনে কাজ করতে হবে।রংপুর জোনের চলমান কাজগুলো দ্রুত শেষ করা দরকার। এই জোনের সঙ্গে সংযুক্ত করিডোর, এর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে সাসেক-১ এবং সাসেক-২। কিন্তু সাসেক-১ এর কাজে অনেক ঢিলেমি হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রী ব্রিজ আন্ডারপাস ফ্লাইওভারসহ অনেকগুলো কাজের উদ্বোধন করেছেন। সেই কাজগুলো শেষ হচ্ছে না। এসব কাজ কেন শেষ হচ্ছে না, এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব চলমান কাজগুলো শেষ করা দরকার। রংপুর জোনের গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টগুলোর কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এখন লকডাউন এ রাস্তাঘাট ফাঁকা রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে কাজের গতি ফিরিয়ে আনতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব ঈদের আগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করতে হবে। বর্ষায় যেন মানুষ দুর্ভোগে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যেগুলো কাজ শুরু হওয়ার কথা সেগুলো শুরু করা দরকার, টেন্ডার করার সময় যত তাড়াহুড়ো থাকে, কাজ শেষ করার ব্যাপারে সেটা দেখা যায় না। এ কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সড়কের গুণগত মান বজায় রাখতে সবাইকে দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকতে হবে। নিম্নমানের কাজ যেন না হয়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় শিডিউল বিপর্যয় করে কাজ করার কারণে বগুড়া-নওগাঁ সড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কন্সট্রাকশনকে একাধিকবার সতর্ক করার পরও কাজে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নিম্মমানের কাজ হলে ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ারসহ সংশ্লিষ্টদের এর দায় দায়িত্ব নিতে হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। এই উন্নয়ন টেকসই হতে হবে।
বিআরটিএ অফিসগুলোতে হয়রানিমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এই অফিস দালাল মুক্ত হতে হবে। অফিসগুলো গতিশীল হতে হবে, দুর্নীতি মুক্ত করতে কঠোর হতে হবে। এ জন্য নজরদারি বাড়ানো দরকার। একই সঙ্গে বিআরটিসি বাসের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। বিআরটিসিতে দায়সারাভাবে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। বাসগুলোর দরজা জানালা লক্করঝক্কর, এসি অচল হয়ে পড়েছে। বিআরটিসিকে লাভজনক করতে হবে। এ জন্য কাজ করার তাগিদ দেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে রংপুুুর সড়ক থেকে যুক্ত ছিলেন- রংপুর জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান, সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রাশেদুল আলম, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শফিকুজ্জামান প্রমুখ।
সভায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রংপুুুর জোনের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ, কাজের অগ্রগতি এবং প্রধান সড়ক-মহাসড়কে ঈদের প্রস্তুতিমূলক কাজের বিষয়ে সেতুমন্ত্রীকে অবগত করা হয়। এ সময় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিআরটিএ এবং বিআরটিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।