- এপ্রিল ২৯, ২০২১
- লিড নিউস
- 376
নিউজ ডেস্কঃ করোনা ভ্যাকসিন সংকটের পর এবার সিলেটে প্রকট হচ্ছে অক্সিজেন সংকট। প্রতিবেশী দেশ ভারত অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় সিলেটের সব ক’টি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে করোনার বিশেষায়িত হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে চিকিৎসায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে!
এমনটি আশঙ্কা করে চিকিৎসকরা বলছেন, এমনিতে হাতে গোনা কিছু হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধা রয়েছে। জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সুবিধা অপ্রতুল থাকায় রোগীদের চাপ পড়ে বিভাগীয় সদরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে। ফলে অক্সিজেন বিড়ম্বনায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
খোঁজ নিযে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ডায়গানস্টিক সেন্টার রয়েছে ১৫২টি। এরমধ্যে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ একটি এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ আছে ৫টি। জেলা সদরে সরকারি সদর হাসপাতাল ৪টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩৪টি, আবাসিক টিভি হাসপাতাল ও সংক্রমণব্যাধি হাসপাতাল একটি করে আছে সিলেটে। এর বাইরে টিভি ক্লিনিক আছে প্রতি জেলায়। খাদিমপাড়ায় আছে ৩১ শয্যার হাসপাতাল। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে ৩৫টি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটে অক্সিজেন সুবিধা আছে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে ২০ হাজার ও ১০ হাজার ঘন লিটারের দুটি প্লান্টে। এগুলো থেকে অক্সিজেন সরবরাহ দিয়ে ১৫ দিন কার্যক্রম চালানো যায়। করোনার বিশেষায়িত হাসপাতাল খ্যাত সিলেটের শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ১০ হাজার ঘন লিটারের একটি অক্সিজেন প্লান্ট আছে। এ দু’টি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ দিচ্ছে স্প্রেক্টা নামক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সিলেটের বেসরকারি তিনটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে। সেগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয় বহুল। এসব হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের বাইরে। এর বাইরে বিভাগের জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন নেই। তবে, সম্প্রতি অক্সিজেন প্লান্টি তৈরির কাজ চলছে বলেও জানা গেছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভারতের করোনার ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে দেশের মানুষকে এখনই সচেতন হতে হবে। নয়তো করোনা আক্রান্ত রোগী বেড়ে গেলে অক্সিজেন সংকট দেখা দেবেই। আর এ ধরনের হলে পথেঘাটে মানুষ মারা যাবে।
এ বিষয়ে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, অক্সিজেনের ৩০ হাজার লিটারের দু’টি প্লান্টে দিয়ে ১৫/২০ দিন সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। ভারত অক্সিজেন সরবরাহে সংকট দেখা দিলে দেড় লিটারের ছোট ছোট কনসেন্টেন্ট দিয়ে চালানো যাবে। তবে, এগুলোতো বেশি নেই। অবশ্য সংকট নিরসনে সরকার আগে থেকেই বিকল্প চিন্তা করছে। তারপরও মানুষকে সচেতন হতে হবে। ঈদকে সামনে রেখে যে হারে মানুষের চলাচল বেড়েছে, লোকজনকে বুঝতে হবে-জীবনের চাইতে ঈদ বড় নয়। ব্যবসার চাইতে জীবন বড় নয়, জীবনের জন্য ব্যবসা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের সাবেক উপ পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, প্রতিবেশী দেশের অবস্থা দেখে এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি। বর্তমানে অক্সিজেনের যে সরবরাহ আছে। এভাবে ধারাবাহিক থাকলেও বড়জোর এখন যে পরিমাণ রোগির সংখ্যা, তার চেয়ে দিগুণ হলে সামাল দেওয়া যাবে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি বেড়ে গেলে স্বাস্থ্য সেবায় বিপর্যয় নেমে আসবে। রোগী বেড়ে গেলে তখন কিছুই করার থাকবে না। এর মাসুল ভারতকে দিতে হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। সিলেটে করোনার বিশেষায়িত শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. চয়ন রায় বলেন, হাসপাতালে ১০ হাজার ঘন লিটারের অক্সিজেন প্লান্ট দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন একজন রোগীকে দৈনন্দিন ৮০ ঘন লিটার অক্সিজেন সরবরাহ দিতে হয়। এছাড়া উপস্বর্গ নিয়ে আসা এবং কোভিড-১৯ পজিটিভরা তো আছেনই। সে হিসাবে ১০ হাজার ঘন লিটারে মাত্র ৫/৬দিন চালানো সম্ভব। ফলে অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপর্যয় সৃষ্টিতো হবেই। বর্তমানে হাসপাতালে ৭১ জন রোগী ভর্তি আছেন। এরমধ্যে ৪৩ জনের করোনা পজিটিভ, ২৮ জন উপসর্গ নিয়ে এবং ১৪ জন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বাজারে তিন সাইজের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলো চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ছোট সিলিন্ডারে ১ দশমিক ৫ ঘন মিটার, মাঝারি ৩ ঘন মিটার এবং বড় সিলিন্ডার ৮ দশমিক ৩ ঘন মিটার অক্সিজেন থাকে। সংকট সৃষ্টি হলে এগুলোতেও সংকট সৃষ্টি হতে পারে!
সংশ্লিষ্টরা আরো বলেন, দেশে অক্সিজেন সংকট দেখা দিলেও বেসরকারি কোম্পানিগুলো অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে। এরমধ্যে আবুল খায়ের গ্রুপসহ আয়রন মিলগুলো থেকে সরকার অক্সিজেন সরবরাহে সহযোগিতা নিতে পারবে।সূত্র: বাংলানিউজ