- জুন ৯, ২০২১
- জাতীয়
- 292
নিউজ ডেস্কঃ দেশের উন্নয়নে ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের বিষয়টি বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে ছাতক-দোয়ারা অঞ্চলের আপামর মানুষ মনে করেন। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এমন প্রত্যাশায় এখন প্রহর গুনছেন তারা। সিলেট-ছাতক রেললাইন জেলা সদর সুনামগঞ্জ হয়ে তা মোহনগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত হলে রাজধানী ঢাকার সাথে রেলওয়ের একটি বৃত্তাকার পথ সৃষ্টি হবে এবং ভাঁটি অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশের আরও একটি জেলা শহর রেল যোগাযোগের উন্নয়নের আওতায় আসবে। এ লক্ষ্যে ছাতক রেলওয়ে স্টেশন থেকে রেললাইনকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করে তা মোহনগঞ্জের সাথে যুক্ত করার ক্ষেত্রে একটি অ্যালাইনমেন্টও তৈরি করা হয়েছিল বিগত দিনে। সরকারের বর্তমান মেয়াদের মধ্যেই ছাতক স্টেশন থেকে দোয়ারা হয়ে সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইনের কাজ শেষ হবে বলে আশায় বুক বেঁধেছে ছাতক-দোয়ারাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ।
ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপন নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ২০১২ সালে কয়েক দফা এলাকা সরজমিনে পরিদর্শনসহ সমীক্ষাও চালিয়েছেন। কিন্তু রেললাইন স্থাপনে পূর্বের অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন হচ্ছে এমন গুঞ্জনে সাধারণ মানুষের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তনের আশংকাও করছেন জেলার ৫ এমপিসহ জনপ্রতিনিধিরা।
এ ব্যাপারে সহজ ও সঠিক অ্যালাইনমেন্টে ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে ৮ জুন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জয়াসেন গুপ্ত, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ও সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এমপি বরাবরে দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, দেশের শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত ছাতকে রেলপথ স্থাপিত হয় ১৯৫৪ সালে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ছাতক রেললাইনে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করার যৌক্তিক দাবী উঠে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছরেও কোন সরকারই ছাতক-দোয়ারাবাসীর এ দাবির প্রতি কর্ণপাত করেননি। ২০১১ সালে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় ছাতক-দোয়ারা-সুনামগঞ্জ রেলপথ স্থাপনের দাবিটি আবারও জোরালো হয়ে উঠে।
২০১২ সালে ছাতকের আকিজ মাঠে রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে দেয়া বিশাল এক গণসংবর্ধনা সভায় তিনি ছাতক-দোয়ারাবাসীর দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কয়েক দফা সরজমিনে এলাকা পরিদর্শনসহ সমীক্ষা চালিয়ে এর একটি অ্যালাইনমেন্টও তৈরি করেছিলেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেন বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। রেললাইন স্থাপনে তার আন্তরিক প্রচেষ্টার কথা ছাতকসহ জেলার বিভিন্ন জনসভায় ঘোষণা দিয়ে অত্র অঞ্চলের মানুষকেও আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন করে নতুন অ্যালাইনমেন্টে ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে এমন আশংকার কথা রেলমন্ত্রীকে দেয়া জেলার ৫ এমপি স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, নতুন অ্যালাইনমেন্টে রেললাইন স্থাপন করা হলে এর দূরত্ব এবং অর্থ ব্যয় হবে কয়েকগুণ বেশি। পূর্বে করা অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী স্থাপিত হলে ছাতক-সুনামগঞ্জ রেললাইনের দূরত্ব হবে মাত্র ২২ কিলোমিটার। এ দূরত্বের মধ্যে দু-একটি খাল ছাড়া আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না এবং সুরমা নদী থেকে রেললাইনের দূরত্ব হবে ৩-৪ কি:মি: দূরে। যা দেখার হাওরের উত্তর পাশ দিয়ে সুনামগঞ্জ প্রবেশ করবে। এ ছাড়া রেললাইন স্থাপনে জীববৈচিত্র্যের কোন অনিষ্ট ও নদী ভাঙনে রেললাইনের কোন ক্ষতি হবে না এবং অত্র অঞ্চলের সিংহভাগ মানুষ উপকৃত হবে বলে মন্ত্রী বরাবরে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ছাতক রেলস্টেশন হতে দোয়ারাবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ সদর পর্যন্ত অ্যালাইনমেন্টে রেললাইন স্থাপন কাজ হবে সহজ, অধিকতর সাশ্রয়ী, বাস্তবমুখী ও যৌক্তিক। বর্ণিত অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী ছাতক-সুনামগঞ্জ-মোহনগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের জন্য রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান সুনামগঞ্জ জেলার ৫ এমপি।