- জুন ১৩, ২০২১
- জাতীয়
- 294
নিউজ ডেস্কঃ করোনা মহামারির মধ্যেও রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে কোনো অর্থবছরে এতো পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি দেশে। এর মধ্যে সিংহভাগ রেমিট্যান্স এসেছে পাঁচটি দেশ থেকে। গত ১১ মাসে মোট আহরিত রেমিট্যান্সের প্রায় ৬৩ শতাংশই পাঠিয়েছেন ওই পাঁচ দেশের প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেশভিত্তিক রেমিট্যান্স সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম ১১ মাসে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ১১৪ কোটি টাকা)। এর মধ্যে প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষে থাকা ১০ দেশ থেকে এসেছে ২ হাজার ১৯ কোটি ৮ লাখ ডলার। যা মোট রেমিট্যান্সের ৮৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।
প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো : সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ওমান, কাতার, ইতালি ও সিঙ্গাপুর।
এর মধ্যে শীর্ষ ৫ দেশ (সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্য) থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বা ৬৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ৫ দেশ (সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান ও কাতার) থেকে এসেছে ১ হাজার ১৯৮ কোটি বা প্রায় ৫২ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বিশ্বের ১৬৮ দেশে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। বাংলাদেশের প্রবাসীদের সব চেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২২ লাখের মতো বাংলাদেশি অভিবাসী সৌদি আরবে কর্মরত আছেন।
তথ্য বলছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে দেশটি থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৫২৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। যা মোট আহরিত রেমিট্যান্সের ২৩ শতাংশ।
অর্থবছরের ১০ মাসে রেমিট্যান্স আহরণের দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩১৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২২৬ কোটি ডলার । চতুর্থ স্থানে থাকা মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯০ কোটি ডলার, ৫ম দেশ যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৭ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। এছাড়া কুয়েত থেকে ১৭৩ কোটি ২২ লাখ ডলার, ওমান থেকে ১৪১ কোটি ৭১ লাখ ডলার, কাতার থেকে ১৩০ কোটি ডলার, ইতালি থেকে ৭৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার এবং সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৮ কোটি ১৩ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরে ১১ মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এদিকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ চাঙা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সর্বশেষ ২ জুন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৫.০৮ বিলিয়ন বা চার হাজার ৫০৮ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসাবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি এক শতাংশ দেওয়ার অফার দিচ্ছে। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।