• জুন ২০, ২০২১
  • শীর্ষ খবর
  • 311
সাংসদের ‘হাওর বাংলা’ নিয়ে কথা বলা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার পাইকুরাটি গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা বিকাশ রঞ্জন সরকারের (৫৫) বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। উপজেলার নওধার গ্রামের বাসিন্দা বশির আহম্মেদ বৃহস্পতিবার ধরমপাশার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। মামলায় বিকাশ রঞ্জনের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। আদালতের বিচারক বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে বিকাশ রঞ্জন সরকার বলেছেন, ‘এটিও মিথ্যা অভিযোগ। আমি সংসাদের বিলাসবহুল বাড়ি ‘হাওর বাংলা’ নিয়ে কথা বলায় এবং আমি যেন আমার জমির দাবি থেকে সরে আসি, সে জন্য আমার ওপর হামলা ও একের পর এক মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। এই মামলার বাদী ও সাক্ষীরা সাংসদের ঘনিষ্ঠজন।’

বিকাশ রঞ্জন দীর্ঘদিন ধরে ধরমপাশা উপজেলা সদরে বসবাস করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ‘অন্যের জমি দখল করে সাংসদের হাওর বাংলা’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতনের বিরুদ্ধে বিকাশ রঞ্জন সরকারের কিছু অভিযোগ তুলে ধরা হয়।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি। তবে এ বিষয়ে সাংসদের ভাই মোশারফ হোসেন বলেছেন, ‘উনার (বিকাশ রঞ্জন সরকার) বিরুদ্ধে কে বা কারা মামলা দায়ের করেছে আমরা এর কিছুই জানি না। আমাদের এসবে জড়ানো ঠিক নয়। আমরা কেন অন্যকে দিয়ে মামলা করাতে যাব। বরং উনি আমার বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এলাকার সবাই সেটা জানে।’

সাংসদের বিরুদ্ধে বিকাশ রঞ্জনের অভিযোগ ছিল, পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওধার গ্রামে নির্মিত সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনের বিলাসবহুল বাড়ি ‘হাওর বাংলা’র ভেতরে আরেক ব্যক্তির জমির সঙ্গে তাঁরও ৩০ শতক জমি আছে। সাংসদ এসব দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া সাংসদের দুই ভাইয়ের নামে তিনি ২ একর ৬৫ শতক জমি একবার দলিল করে দিয়েও কোনো টাকা পাননি। বিকাশ রঞ্জন সরকার বলেন, ‘ওই সংবাদ প্রকাশের পর থেকে তাঁর ওপর সাংসদ ও তাঁর লোকজন ক্ষুব্ধ।’

এরপর সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনের বড় ভাইকে না জানিয়ে জমি বিক্রি করায় ৩ মে দুপুরে উপজেলার পাইকুরাটি নতুন বাজারে বিকাশ রঞ্জন সরকারকে মারধর করা হয়। এতে সাংসদের ভাই মোশারফ হোসেন (৫৮) ও ভাতিজা তানভীর হোসেন (২৪) নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মারধরের পর বিকাশ রঞ্জনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। মোশারফ হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক।

মারধরের ঘটনায় বিকাশ রঞ্জন সরকার গত ৪ মে রাতে ধরমপাশা থানায় সাংসদের ভাই মোশারফ ও ভাতিজা তানভীরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ৫ মে রাতে সাংসদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পাইকুরাটি গ্রামের বাসিন্দা পিন্টু দে (৩২) থানায় বিকাশ রঞ্জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন। মামলায় পিন্টু দে অভিযোগ করেন, বিকাশ চার মাস আগে পাইকুরাটি নতুন বাজারে ৪ শতক জমি ১০ লাখ টাকা দাম ধরে তাঁর কাছে থেকে তিন লাখ টাকা বায়না নিয়েছিলেন। এক মাস পর বাকি টাকা নিয়ে জমি নিবন্ধন করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। ২ মে বাজারে বিকাশকে পেয়ে পিন্টু জমি দলিল করে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু বিকাশ জমি দলিল দেওয়া অস্বীকার করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।

এ বিষয়ে বিকাশ রঞ্জন বলেন, ‘পিন্টুর মামলাটিও সাজানো। এখন বশির আহম্মেদ নামের ব্যক্তি যে মামলাটি করেছেন সেটিও আমাকে হয়রানির উদ্দেশে। আমি সাংসদের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করায় আমার বিরুদ্ধে এসব করা হচ্ছে।’
সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য বিকাশ রঞ্জন সরকারকে নিজের লোক দাবি করে তাঁর জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তা বিকাশ রঞ্জনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার আদালতে হওয়া মামলার আরজিতে উল্লেখ করেন, বিকাশ রঞ্জন তাঁর পাশের গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একসময় কৃষিঋণ পাওয়ার জন্য ধরমপাশার কৃষি ব্যাংকে যোগাযোগ করলে আসামির সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাঁর সহযোগিতায় তিনি পাঁচ হাজার টাকা কৃষিঋণ নেন। ১০-১২ বছর পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে পাওনা ৩০ হাজার ১৮ টাকা পরিশোধের জন্য তাগিদ দেয়। তিনি তখন বিকাশ রঞ্জন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এই টাকা পরিশোধের পরামর্শ দেন। এরপর তিনি গরু বিক্রি করে এই টাকা এলাকার বাদশাগঞ্জ বাজারে কয়েকজন সাক্ষীর সামনে বিকাশ রঞ্জন সরকারের হাতে তুলে দেন। ওই সময় ১৫ দিন পর বিকাশ রঞ্জন সরকার তাঁকে আরও ৬০ হাজার টাকার ঋণের ব্যবস্থা করে দিবেন বলে কথা হয়। কিন্তু ১ জুন ব্যাংকে গিয়ে তিনি জানতে পারেন এই টাকা জমা দেওয়া হয়নি। পরে টাকার বিষয় নিয়ে বিকাশ রঞ্জন সরকারের সঙ্গে কথা বললে তিনি তাঁকে শায়েস্তা করার হুমকি দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেছেন, তিনি আদালতের কোনো নির্দেশনা এখনো পাননি।