- জুন ২২, ২০২১
- শীর্ষ খবর
- 322
নিউজ ডেস্কঃ সিলেট নগরীর কেন্দ্রস্থলের জিন্দাবাজার এলাকার পার্শ্ববর্তী একটি মহল্লার নাম ‘জল্লারপার’। কিন্তু সেখানে কোনো ‘জল্লা’ (জলাশয়) চিহ্নিত ছিল না। সাত বছর আগে ছড়া উদ্ধার অভিযানের সূত্র ধরে সরেজমিন অনুসন্ধানে মিলল জল্লারপারের হারানো ‘জল্লা’। আজ মঙ্গলবার সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে টানা তিন ঘণ্টার অভিযানে জল্লাটি উদ্ধার হয়। প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যমানের পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই জল্লার অবস্থান। দখল ও দূষণের হাত থেকে জল্লা উদ্ধার করে একটি উদ্যান গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
অভিযানে মেয়রের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীসহ প্রকৌশল ও ভূমি শাখার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযান চলাকালে জল্লা এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, সকালেই জলাভূমি চিহ্নিত হলে ওই এলাকার স্থায়ী ও প্রবীণ লোকজন সিটি করপোরেশনের ভূমি-সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের দেখিয়ে দেন পুরো এলাকা। এরপর প্রাথমিকভাবে মাপজোখ করে পাঁচ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়। কিছুটা গোলাকার জল্লার জায়গায় খননযন্ত্র চালিয়ে বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়। এরপর জল্লা–তীরবর্তী এলাকায় দখলের উদ্দেশ্যে যত্রতত্রভাবে লাগানো কলাগাছসহ কিছু গাছের ডালপালা কেটে চারদিকের জায়গা পরিচ্ছন্ন করা হয়।
সিলেট নগরীকে একসময় দিঘির শহর বলা হতো। এখন দিঘির নামে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার নাম আছে, কিন্তু দিঘি নেই। তেমনি বন-ঝোপবেষ্টিত বদ্ধ জলাশয়কে সিলেট নগরীতে ‘জল্লা’ বলে ডাকার প্রচলন অনেক পুরোনো বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, এসব জল্লা জীববৈচিত্র্যের আধার বলা চলে। জলজ উদ্ভিদ ও মাছের বংশবিস্তার হয় জল্লায়।
জল্লা উদ্ধার অভিযান চলাকালে আশপাশ এলাকার মানুষের ভিড় পড়ে যায়। তাঁরা হারানো জল্লা ফিরে পাওয়ায় স্বস্তিও প্রকাশ করেন। ওই এলাকার কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, নগরীর ঠিক মধ্যবর্তী এই জায়গা ব্যবসায়িকভাবে মূল্যবান। চারদিকে আলিশান ভবনের মাঝখানে জায়গাটি যে জল্লার, সেটি তাঁরা ভাবতেও পারেননি। কারণ, চারদিকের ভবনমালিকেরা নিজ নিজ সীমানার বাইরে জল্লা দখল করে রেখেছেন। উদ্ধার অভিযানে দখলকারীরা আর মালিকানা দাবি না করায় জল্লা রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, নগরীর কেন্দ্রস্থল হওয়ায় এই এলাকার এসব জায়গা বলতে গেলে মহামূল্যবান। ২০১৪ সালে জল্লার পাশে ছড়া উদ্ধারের পর ২০১৭ সালে ‘ওয়াকওয়ে’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। এই প্রকল্পে দখল ও দূষণ ঠেকিয়ে ৯০০ ফুট দীর্ঘ একটি হাঁটার পথ তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সূত্র ধরে হারানো জল্লা খুঁজে বের করার বিষয়টি সামনে আসে। সাত বছরের মাথায় একই জায়গায় অভিযানে মিলল জল্লা।
সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, অভিযানে প্রাথমিকভাবে পাঁচ একর সরকারি জায়গা উদ্ধার করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এ জায়গা জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমন্বয়ে সিটি করপোরেশন জরিপ করে স্থায়ীভাবে সীমানা চিহ্নিত করা হবে। নগরীর কেন্দ্রস্থলের এই এলাকায় জমির শতকের মূল্য ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে ৫০ একর জায়গার মূল্য ১০০ কোটি টাকার ওপরে হবে বলে জানিয়েছেন এই প্রকৌশলী।
সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘অভিযান চালাতে গিয়ে জেনেছি, এখানে কিছু জায়গা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ আছে। একটি আবাসন কোম্পানি বাকি জায়গার দাবিদার ছিল। আর কারা কারা মালিক-দাবিদার, সেটি খোঁজা হবে। যেহেতু এটি জলাশয়, তাই মালিক পেলেও আমরা আইন অনুযায়ী জলাশয় ব্যতীত অন্য কিছু করতে দেব না।’