- জুন ২৪, ২০২১
- শীর্ষ খবর
- 302
বিশেষ প্রতিবেদনঃ সারি সারি নারকেলগাছ। যেন প্রবেশপথে সবুজ এক শোভা। এই নারকেলবীথির ঠিক বিপরীতে আরও কয়েকটি চারা রোপণ করা। নতুন-পুরোনোর সম্মিলন দেখিয়ে কথার শুরুটা স্মৃতি রোমন্থনের মতো। বলছিলেন, ‘আমি ছিলাম না এখানে। কিন্তু আমার লাগানো গাছ আছে, থাকবেও। সত্যিই বৃক্ষ আদিপ্রাণ!’
গাছ নিয়ে ‘আদিপ্রাণ’ মন্তব্য করা পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. জেদান আল মুসা। পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার পদে কর্মরত আছেন। এ কার্যালয়ের প্রবেশপথের নারকেলবীথি তাঁর রোপণ করা। প্রাঙ্গণজুড়ে আছে নানা ফলদ গাছ, আছে আদিপ্রাণের আদিগাছ নাগেশ্বরও।
সিলেটে সুরমার নদীতীরে দক্ষিণ সুরমার আলমপুর এলাকায় ডিআইজির কার্যালয়। ২০০৮ সালের দিকে কার্যালয়ের অঙ্গন অনেকটা বৃক্ষশূন্য ছিল। তখন ডিআইজির স্টাফ অফিসার পদে আসেন জেদান আল মুসা। তিনি সেই ফাঁকা প্রাঙ্গণ ভরিয়ে দিয়েছিলেন নারকেলগাছের ১০০টি চারা রোপণ করে। শুধু রোপণ করেই ফেলে রাখেননি, নিজের হাতে করেছেন পরিচর্যা। তারপরও বাঁচতে পেরেছিল মাত্র ৫৭টি গাছ। সেখানে ২ বছরে দুটি বর্ষায় ১০০টি নারকেলগাছ ও ৫০০টি ফলদ গাছ রোপণ করেছিলেন তিনি।
আলাপ করে জানা গেল, গাছের প্রতি তাঁর এ টান রবীন্দ্রনাথের ‘বৃক্ষবন্দনা’ কবিতা থেকে এসেছে সেই ছাত্রজীবনে। আর গাছ লাগানোর পণ চাকরিজীবনের শুরুতেই। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগে পড়শোনা করেছেন। ২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন। ২০০৭ সালে তাঁর প্রথম কর্মস্থল সাতক্ষীরায়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। সেই অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে জেদানের গা শিউরে ওঠে। তিনি বলেন, ‘যদি গাছপালা না থাকত, সুন্দরবন না থাকত, তাহলে মানুষের প্রাণ রক্ষা পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকত না।’ সেই থেকে পণ করেন, চাকরিজীবনে যেখানে যাবেন, সেখানেই গাছ রোপণ করবেন।
কর্মসূত্রে জেদান কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নরসিংদী ও দুবার জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছেন। সব কটি জায়গায়ই লাগিয়েছেন গাছ। দারফুর ও সুদানে থাকাকালে গাছ লাগানোর কোনো মৌসুম না খুঁজেই নিম ও কড়ই প্রজাতির ২০০টি গাছ লাগিয়েছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। এখন পর্যন্ত ১০–১২ হাজার গাছ লাগিয়েছেন।
জেদানের গাড়িতেই থাকে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার যন্ত্রপাতি। কর্তব্যরত অবস্থায় কোথাও গাছ ক্ষতির মুখে দেখলে লেগে যান পরিচর্যায়। নিজের টাকাতেই লাগান নতুন গাছ। এবার ডিআইজি কার্যালয় ছাড়াও সিলেট রেঞ্জের সব থানা বা দপ্তরে নারকেল, তালগাছসহ সিলেট অঞ্চলের আদিগাছ রোপণের ইচ্ছা তাঁর। মুজিব বর্ষ তিনি উদ্যাপন করেছেন ১০০টি গাছ রোপণ করে। টাঙ্গুয়ার হাওরে হিজল-করচবাগের ফাঁকে গাছ লাগিয়েছেন।
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত বছর আমি যখন সিলেটে যোগ দেই, তখন করোনাকালের পিক সময়। মানুষের স্বাভাবিক সব কর্মকাণ্ড যেখানে প্রায় বন্ধ, সেখানে বর্ষাকালে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিটি জেদান চালিয়ে গেছেন। এ কাজ তাঁর একান্ত নিজের সময় থেকে করছেন। এ জন্য পুলিশের দায়িত্ব পালনেও কোনো ব্যাঘাত হয় না।’ সূত্র: প্রথম আলো