• জুলাই ১৭, ২০২১
  • শীর্ষ খবর
  • 236
সিলেটে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা, জমজমাট প্রচারণা

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে প্রচারণা। এখানে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে তাঁরা উন্নয়নমূলক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা গ্রামে গ্রামে উন্নয়নমূলক কথা বলে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

তবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। অনেকে মারাও যাচ্ছেন। অথচ প্রতিদিনই প্রার্থীরা ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাই সংক্রমণ ঠেকাতে দ্রুততার সঙ্গে এই উপনির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া উচিত।

সিলেট নগরের উপকণ্ঠে তিনটি উপজেলা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার। ভোটকেন্দ্র আছে ১৪৯টি। ২৮ জুলাই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে এখানে। গত ১১ মার্চ করোনায় সংক্রমিত হয়ে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চার প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান (নৌকা), জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপির সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী (মোটরগাড়ি কার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া (ডাব)।

সাধারণ ভোটাররা জানান, উপনির্বাচন হলেও প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকার তিনটি উপজেলাই প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা চষে বেড়াচ্ছেন। পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে চারপাশ। প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছেন। ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি প্রার্থীরা দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। ভোটাররাও তাঁদের নিয়ে শুরু করেছেন বিচার-বিশ্লেষণ। গ্রাম-শহর, পাড়া-মহল্লায় গল্প-আড্ডায় আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন হাবিবুর রহমান, শফি আহমদ চৌধুরী ও আতিকুর রহমান। মূলত এ তিনজনের মধ্যেই মূল লড়াই হবে।

গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান গণসংযোগের পাশাপাশি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বিভিন্ন সভায় বক্তব্য দেন। গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে হাবিবুর বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের মানুষের সেবা কাজ করছি। এবারই প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচিত হতে পারলে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারায় সিলেট-৩ আসনকে আরও উন্নত ও নান্দনিক করতে চাই।’

প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাবিবুর রহমান প্রচারণায় ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর ভাঙন ঠেকাতে উদ্যোগের পাশাপাশি সিলেট-৩ আসনে জনদুর্ভোগ লাঘবে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী বিজয়ী হলে নির্বাচনী এলাকায় গ্যাস-সংযোগ সরবরাহের আশ্বাস দিচ্ছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান তিনটি উপজেলায় স্টেডিয়াম নির্মাণ, কর্মসংস্থান তৈরিসহ উন্নয়নমূলক নানা উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান এ আসনে দুবার নির্বাচন করলেও পরাজিত হন। সর্বশেষ ২০০৮ সালে তিনি তৃতীয় হন। সেই নির্বাচনে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বিজয়ী হয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় হয়েছিলেন শফি আহমদ চৌধুরী। এবারের উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনিও দিনরাত কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন। তাঁর সমর্থকেরা জানিয়েছেন, মানুষের ভালোবাসা নিয়ে আতিকুর রহমান ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এখানকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের নিবিড় সম্পর্ক। তাই আতিকুরের জয়ের ব্যাপারে তাঁরা শতভাগ আশাবাদী।

রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, সিলেটের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও মেজাজ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে একটু ভিন্ন। দলের পাশাপাশি এখানে ব্যক্তির মূল্যায়ন করেন অনেক ভোটার। এই আশায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী। নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। তিনি এ আসনে বিএনপির টিকিটে দুবার সাংসদ হন। গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর কাছে হেরে যান।

গতকাল দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য দেন শফি আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দলমত-নির্বিশেষে সবাই আমাকে পছন্দ করেন। অতীতে যখন সাংসদ ছিলাম, তখন আমি কোনো ভেদাভেদ করে উন্নয়ন করিনি। ভোটাররা অবশ্যই এসব বিবেচনায় নিয়ে ভোট দেবেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের প্রত্যাশা করছি।’

উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ঈদের কারণে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। তাই প্রচার-প্রচারণাও চলছে। ঈদের কদিন পরেই যেহেতু উপনির্বাচন, তাই পেছানো হবে না। যথাসময়ে নির্বাচন হবে। এ কারণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।