• জুলাই ২৬, ২০২১
  • শীর্ষ খবর
  • 223
সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করছেন হাইকোর্ট। ফলে আগামী বুধবার (২৮ জুলাই) এই আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ হচ্ছে না।

এক রিটের শুনানি নিয়ে আজ সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের একক ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালত বলেছেন, ‘সবকিছু বিবেচনা করলাম, যেহেতু আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন করার সময় আছে। আপাতত ৫ আগস্ট পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত করছি। যেহেতু সরকারি সার্কুলারে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ আছে। পরে আদালত খোলার পর সময় ঠিক করে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

হাইকোর্ট এ আদেশের বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে বলেছেন।

করোনা সংক্রমণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বরাবরে আইনি নোটিশ পাঠান পাঁচ আইনজীবী। অন্যথায় তাঁরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী ও আসনটির সাতজন ভোটার আজ সোমবার সকালে হাইকোর্টে রিটটি দাখিল করেন। তার শুনানি নিয়ে আদেশ দেন আদালত।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার শুনানিতে ছিলেন।

শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘মার্চের ২১ তারিখে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৪ দফার শর্তানুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আছে। এ হিসাবে ৮ জুন ৯০ দিন হয়। তখন নির্বাচন কমিশন বলেছে, দৈবদুর্বিপাকের কারণে এই দফার বিধান মানতে পারছে না। ৮ জুন তারা নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করেছিল। তবে সেদিন নির্বাচন করতে পারেনি। দৈবদুর্বিপাকের কারণে পারেনি। যে কারণে ৮ জুন থেকে ইসি আরও ৯০ দিন সময় পাবে। তাহলে ইসির সামনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৯০ দিন হিসাবে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। এই সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে ইসি বলতে পারবে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। এরপর ২৮ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হলো। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যখন সিলেটে গেলেন, তখন সাংবাদিকেদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠান করছেন। অথচ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হলো ২৮ জুলাই থেকে নির্বাচনের জন্য আরও ৪২ দিন সময় আছে নির্বাচন কমিশনের হাতে।’

সিলেটে করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি ও মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তাও করোনায় আক্রান্ত হয়ে রোববার মারা গেছেন। এখানে জীবনের অধিকারের প্রশ্ন। এখানে কারও পক্ষে বা বিপক্ষের প্রশ্ন নেই। নির্বাচন স্থগিতের পক্ষেও নই। নির্বাচন কমিশনের হাতে ৪২ দিন সময় আছে। সরকার টিকা দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে। আগামী ৭ আগস্ট এক দিনে ৬০ লাখ টিকা দেবে বলে বলছে সরকার। করোনাকালে ২০ কোটি টিকা সরকার ব্যবস্থা করছে বলে বলেছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা সুরক্ষা নেবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কোনো প্রশ্ন এখানে নেই আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাহলে কেন এত তাড়াহুড়া? এর পরে হলে অসুবিধা। নির্বাচন তারিখ পরিবর্তন চাইছি, সময় আছে। সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। এখানে ৩ লাখ ৫২ হাজার ভোটার। এ ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ দিন পরে নির্বাচন হলে ভোটাররা নিরাপদ। জীবনের কি মূল্য নেই?’

অন্যদিকে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে। প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যদি নির্বাচন না হয়। প্রার্থীরা তো আসেননি। প্রার্থীরা নির্বাচন করার জন্য সম্মত আছেন। ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। স্বাস্থ্যবিধি সব মেনে ভোট গ্রহণ হবে বলে ইসি জানিয়েছে। ইতিমধ্যে ইভিএম পাঠানো হয়েছে।

গত ১১ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়। ধার্য সময় অনুযায়ী, এই আসনে আজ সোমবার মধ্যরাতে প্রচার শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর আগামী বুধবার ভোট হওয়ার কথা ছিল।

সিলেট নগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত তিন উপজেলা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে সিলেট-৩ আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার। কেন্দ্র ১৪৯টি।

উপনির্বাচনে মাঠে থাকা প্রার্থী চারজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান (নৌকা), জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান (লাঙ্গল), নির্বাচনে নেমে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী (মোটরগাড়ি-কার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া (ডাব)।