- জুলাই ৩১, ২০২১
- শীর্ষ খবর
- 309
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যৌতুক না পেয়ে হাত-পা বেঁধে এক গৃহবধূকে নদীতে ভাসিয়ে হত্যা চেষ্টা অভিযোগ উঠেছে স্বামী, শ্বশুর ও দুই দেবরের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (৩০ জুরাই) রাত ৮টার দিকে উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের বাদালার পাড় গ্রামে এ নির্মম ঘটনাটি ঘটেছে।
স্বামীর মধ্যযুগীয় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর নাম মাইফুল নেছা (২৩)। মাইফুল নেছা উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদলার পাড় গ্রামের কারী নিজাম উদ্দিনের মেয়ে।
অভিযোগ উঠেছে, যৌতুকের টাকা না দেয়াই হাত পা ও মুখ স্কচটেপ লাগিয়ে ভাঙ্গার খাল নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন পাষান্ড স্বামী, শ্বশুর ও দুই দেবর। নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার সময় প্রতিবেশিরা দেখে ফেলে। পরে নদীর পাড় থেকে হাত-পা ও মুখে স্কচটেপ বাঁধা অবস্থায় ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেন প্রতিবেশিরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আট মাস পূর্বে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার চৌধুরীপাড়া গ্রামের সাজিদুলের ছেলে আবু তাহের জান্নাতের (২৮) সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদলার পাড় গ্রামের কারী নিজাম উদ্দিনের মেয়ে মাইফুল নেছার পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী আবু তাহের জান্নাত পার্শ্ববর্তী ভোলাখালি গ্রামের এক ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে সংসার শুরু করেন। পাশাপাশি তার দুই সহোদর জাকির (২৫), বাবুল (২২), পিতা মিলে পোল্ট্রি মোরগের ব্যবসা শুরু করেন।
বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী আবু তাহের জান্নাত স্ত্রীর কাছে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন। পরে কয়েক ধাপে যৌতুকের ৫০ হাজার টাকা পিতার নিকট থেকে স্বামীকে এনে দেন স্ত্রী। গত মাস খানেক ধরে স্ত্রীকে আবার যৌতুকের টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন স্বামী। কিন্তু টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্ত্রীর উপর প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন তিনি। নির্যাতন সইতে না পেরে অবশেষে মাইফুল নেছা তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। স্বামীর বাড়ী থেকে ফিরে আসার প্রায় এক মাস পর শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা ৮টার দিকে মাইফুল নেছা প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাইরে গেলে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা আবু তাহের জান্নাত, তার দুই সহোদর ও বাবা মিলে মাইফুল নেছাকে জোর করে তোলে নিয়ে হাত পা ও মুখে স্কচটেপ বেঁধে সড়কের পাশে ভাঙ্গার খাল নদীতে নিয়ে নিক্ষেপ করার সময় প্রতিবেশীরা ঘটনাটি দেখে এগিয়ে আসলে তারা কোন উপায় না পেয়ে এসময় দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে প্রতিবেশী ও তার পরিবারের লোকজন মাইফুল নেছাকে মমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন।
এদিকে গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনা দেখতে পেয়ে প্রতিবেশী মো. সুমন আহমেদ ৯৯৯ ফোন করলে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিদর্শন করেন।
মাইফুল নেছার ছোট ভাই মো. এবায়দুল্লাহ বলেন, বিয়ের পর থেকেই তারা আমার বোনকে নির্যাতন করছিল। যৌতুকের ৫০ হাজার টাকার দাবি মেটানোর পরও নির্যাতন বন্ধ করেনি। আজ তারা হাত পা বেঁধে আমার বোনকে নদীতে ভাসিয়ে হত্যা চেষ্টা করেছে।
অভিযুক্ত আবু তাহের জান্নাতের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো.আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, ভিকটিম পরিবার থেকে ৯৯৯ ফোন করে বিষয়টি জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে গৃহবধূকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেকে ভর্তি করা হয়েছে। গৃহবধূর পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।