- আগস্ট ৩, ২০২১
- লিড নিউস
- 298
নিউজ ডেস্কঃ সিলেট বিভাগে দুদিন ধরে করোনা শনাক্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড হচ্ছে। মৃত্যুও বাড়ছে। করোনার সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতির সময়ও চালু করা যাচ্ছে না সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের ৪৫০ শয্যার করোনা ইউনিটটি। শুধু সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা না থাকায় ইউনিটটি পড়ে আছে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত রোববার পর্যন্ত করোনা ইউনিটে ২০০টি শয্যার বিপরীতে ২৩০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। অবশ্য গতকাল সোমবার থেকে হাসপাতালটিতে দুটি আইসিইউ শয্যাসহ ৫৭টি শয্যা বাড়ানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, নতুন ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ৪৫০টি নতুন শয্যা পাতা রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় শয্যাগুলোকে শুধু করোনা ইউনিটে রূপান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংকট দেখা দেওয়ায় সিলেট সিটি করপোরেশন সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল। গত ১৮ জুলাই সিটি মেয়র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে তাঁর সেই প্রস্তাবের কথা জানান। সেই চিঠি দেওয়ার দুই সপ্তাহেও কোনো সাড়া মেলেনি।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে যে অবস্থা চলছে, বিশেষজ্ঞরা একে করোনার চূড়া (পিক টাইম) বলে অভিহিত করছেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে চিঠি দিয়েছি, সেখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের কথা উল্লেখ করেছি। এতে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং বেসরকারিভাবে সেটি করার সক্ষমতা ও অর্থের জোগান কীভাবে হবে, সেটিও আমরা দ্রুত বাস্তবায়নের পর্যায়ে রেখেছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির সময়ে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।’
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ—এই চার জেলায় গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭১৬ দাঁড়াল। একই সময়ে ১ হাজার ৯৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৫৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ৬৫। এর আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে সর্বোচ্চ ৯৯৬ জনের করোনা শনাক্তের রেকর্ড করা হয়েছিল। চার জেলায় মোট ৪১ হাজার ৩০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে, করোনার জন্য সরকারি দুটি হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ৮৪টি ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫৫টি শয্যা রয়েছে। বেসরকরি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে আরও প্রায় ২০০টি শয্যা রয়েছে। শনাক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ায় সাধারণ ও আইসিইউ শয্যার জন্য রোগী এবং স্বজনেরা বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন।
করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালনকারীরাই বলছেন, ৪৫০ শয্যার নতুন ইউনিটটি চালু হলে চলমান পরিস্থিতির মোকাবিলা অনেকটা সহজ হতো। কিন্তু প্রায় আট মাস আগে প্রস্তাব করা নতুন ৪৫০টি শয্যা সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধাসহ চালু না হওয়ার পেছনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতাকে দায়ী করছেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা গত জানুয়ারি মাসে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। এখনো সেটির অনুমোদন আসেনি। ৪৫০ শয্যার জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপন করতে প্রায় চার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। সিটি করপোরেশন কাজটি করে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ঠিক। বিষয়টি আমরা আলোচনায় রেখেছি।’
সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা গেলে করোনার আইসোলেশন ইউনিট হিসেবে বিরাট একটি ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হতো বলে মনে করছেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হিমাংশু লাল রায়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা এবং সিটি করপোরেশন মিলিয়ে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার। সেটি অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দুই-এক দিনের মধ্যে একটি সুখবর পাওয়া যাবে।’ সূত্র: প্রথম আলো