- আগস্ট ১৬, ২০২১
- শীর্ষ খবর
- 259
নিউজ ডেস্কঃ সিলেট শহর থেকে ৯২ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জ। পৌরসভা হয়েছে ১২ বছর আগে। কিন্তু ‘প্রায় বিচ্ছিন্ন’ এ পৌরসভায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে কম। সীমাহীন দুর্ভোগ থাকলেও সেসব সমাধানে নেই কোনো উদ্যোগ।
গত বৃহস্পতিবার পৌর শহরের ৯টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নাগরিক দুর্ভোগের নানা চিত্র পাওয়া গেল। পৌরসভা ভবনের ১০০ গজের মধ্যে একটি ভাগাড় দেখা গেল। পাশেই ৫০ গজ দূরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়। এমন একটি স্থানে সড়কের পাশে ভাগাড় উপচে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। আধঘণ্টার ব্যবধানে পাঁচজন দোকানি ও হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মচারী সেখানে আবর্জনা ফেলে গেলেন। তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল সেখান থেকে। আর আবর্জনার ওপর মশা-মাছি ও পোকামাকড় ওড়াউড়ি করছিল।
পৌর ভবনের পাশের মতো এমন নোংরা পরিবেশ দেখা গেল হাসপাতাল সড়কেও। তবে সেখানে ভাগাড় নেই। তাই সড়কের পাশেই মানুষজন ময়লা ফেলছেন। ঠিক সড়ক ঘেঁষেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে স্তূপাকারে আছে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক, পলিথিন, কাগজ, উচ্ছিষ্ট খাবারসহ নানা ময়লা-আবর্জনা। এ দুটি স্থান থেকে শেষ কবে আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে, তা-ও মনে নেই আশপাশের বাসিন্দাদের। ফলে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও হাসপাতালে সেবা নিতে আসা লোকজনকে দুর্গন্ধে নাকাল হতে হচ্ছে প্রতিদিন।
হাসপাতাল সড়ক এলাকার ব্যবসায়ী ফোরকান আহমদ বলেন, দুই বছর ধরে তাঁর দোকানের সামনে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। এখানে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা আবর্জনা ফেলছেন। কিন্তু এসব আবর্জনা অপসারণে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। তাই দুর্গন্ধ সঙ্গী করেই পথচারীদের চলতে হচ্ছে। কেবল প্রবল বর্ষণ হলেই এসব আবর্জনা নালার পানিতে ভেসে যায়।
জকিগঞ্জের পৌর মেয়র মো. আবদুল আহাদের ভাষ্য, শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। পৌরসভার পাশে যে ভাগাড় আছে, সেখান থেকেও নিয়মিত আবর্জনা অপসারণ করা হয়।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ৭ দশমিক ২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। এখানকার বাসিন্দাদের ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, অপ্রতুল সড়কবাতি ও পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা, সুপেয় পানির সংকট এবং মশার উপদ্রব বেশি ভোগাচ্ছে। অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট এবং সড়কের ওপর গাড়ি পার্ক করায় প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।
পৌরসভার মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, কলেজ রোড, আনন্দপুর পশ্চিম, হাইদ্রাবন্দ, শেওলা ও কাস্টমস ঘাট এলাকার সড়ক ভাঙাচোরা। কলেজ রোডের অনেক স্থান ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পিচঢালাই উঠে গেছে অনেক স্থানের। প্রায়ই খানাখন্দে পড়ে গাড়ির চাকা আটকে যায়। ছোট-বড় গর্তে বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
কলেজ রোড এলাকার পোশাক ব্যবসায়ী ইমরান আহমদ বলেন, সড়কটি চার থেকে পাঁচ মাস ধরে মাত্রাতিরিক্ত ভাঙাচোরা অবস্থায় আছে। তবে তা পুনর্নির্মাণে নেই কোনো উদ্যোগ।
মেয়র মো. আবদুল আহাদ বলেন, ‘কলেজ রোড সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি, তারা দ্রুত এ সড়ক পুনর্নির্মাণ করে দেবে। পর্যাপ্ত সড়কবাতি লাগানোর চেষ্টা চলছে। পৌরসভা থেকে সুপেয় পানির সরবরাহ করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
কলেজ রোড এলাকায় কথা হয় দুজন পথচারীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, এম এ হক চত্বর এলাকার সড়ক বিভাজক ঘেঁষে সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং টমটমের স্ট্যান্ড তৈরি হওয়ায় যানজট দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে। এ ছাড়া সড়কে যান দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা এবং রাস্তা দখল করে হকাররা পসরা বসানোয় যানজট বাড়ছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমী আক্তার বলেন, যানজট নিরসনে অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে পরিকল্পনা আছে। শিগগির এখান থেকে স্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়া হবে, এমন একটা পরিকল্পনা উপজেলা পরিষদ নিয়েছে। এর জন্য জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় হোসেন আহমদ নামের আরেক পথচারী বলেন, সিলেট জেলা শহর থেকে সবচেয়ে দূরের উপজেলা হওয়ায় মানুষজনের নজরও এই উপজেলার দিকে কম। ফলে পৌরবাসী নানা সমস্যায় জর্জরিত। দিনরাত সমানতালে মশায় কামড়ায়। অধিকাংশ রাস্তায় সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর চলাফেরা করতে সমস্যা হয়।
দূরবর্তী পৌরসভা হওয়ার কারণে কিছু সমস্যা যে হচ্ছে, এটা টের পাওয়া গেল মেয়র মো. আবদুল আহাদের কথাতেও। তিনি বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে পৌরসভার মশকনিধনের ফগার মেশিনটির ব্যাটারি বিকল হয়ে আছে। এটি আবার জেলা শহর সিলেট ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না। তবে এটি দ্রুত নিয়ে আসা হবে।