- সেপ্টেম্বর ১, ২০২১
- জাতীয়
- 306
নিউজ ডেস্কঃ কবরে জিয়াউর রহমানের মরদেহ আছে কি না, সে বিষয়ে কথা বলতে রুচিতে বাধে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এগুলোর উত্তর দেওয়াটা আমাদের পক্ষে কঠিন, ছোট মনে করি। নিকৃষ্ট, রুচিতে বাধে।’
দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
প্রশ্ন ছিল, আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, জিয়াউর রহমানের কবরে তাঁর লাশ নেই। জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা জাতির দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ঘোষক বীর উত্তম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলা হয়। এটা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু না। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জিয়াউর রহমান জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তাঁর ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ দেশে স্বাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। সুতরাং তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না।’
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন মরদেহ আছে কি না, তা প্রমাণ করতে। জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওনার চ্যালেঞ্জ ওনার নিজেকে গ্রহণ করতে বলেন। উনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেটা উনি প্রমাণ করুক। লেট হিম প্রুভড, হি ওয়াজ দ্য ফ্রিডম ফাইটার।’
এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম দলের স্থায়ী কমিটির ৫ জন সদস্যসহ ৫৬ জন নেতা-কর্মী নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতিহা পাঠ করে শ্রদ্ধা জানান।
সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এত নিষ্প্রভ কেন? জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কোথায় নিষ্প্রাণ দেখলেন, আমাদের তো আসতে দেওয়া হয়নি। সরকার বিধিনিষেধ জারি করে আমাদের আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আপনারা কি সেটা দেখেন না? ৩০ জনের বেশি আসা যবে না বলে তারা জানিয়ে দিয়েছে সর্বশেষ। এটা নাকি তাদের কন্ট্রোলে নেই। এটা নাকি এখন আরও বড় নিরাপত্তার আন্ডারে চলে গেছে। এভাবে তারা বাধার সৃষ্টি করছে, এখানে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের লজ্জা হয়, দুঃখ হয়, আজকে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের মাজারে যখন আসি, তখন আমাদের বাধা দেওয়া হয়, আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপি ৪৩ বছর লড়াই-সংগ্রাম করে আজকে ৪৪ বছরে পড়েছে। দীর্ঘ এ ৪৩ বছরে বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমূল ও মৌলিক কতগুলো অবদান রেখেছে। একদলীয় স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তন হয়েছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে। পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতির শাসনব্যবস্থা থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে এসেছে। রাজনীতিতে বিশেষ করে, একদলীয় শাসনব্যবস্থার ফলে বাক্স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার এবং সংবাদপত্রের যে স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল, সেগুলোকে জিয়াউর রহমান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের কাঠামো নির্মাণ করেছেন। একই সঙ্গে অর্থনীতির ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন একটা বদ্ধ তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে। আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতির যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তার মূল ভিত্তি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে স্থাপিত হয়েছিল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সবাই ভেবেছিল যে বিএনপি বোধ হয় শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁর যোগ্য উত্তরাধিকারী খালেদা জিয়া স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের পতাকাকে তুলে ধরেছিলেন। তিনি দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই করেছেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। দুর্ভাগ্য এই জাতির, আজকে সেই নেত্রী ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের, তাদের বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলের কারণে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার কারণে তিনি কারাবন্দী, অন্তরীণ হয়ে আছেন।
৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এখন বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, দেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা এবং গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। আজকে যে ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ৫০০–এর অধিক আমাদের নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, এ অবস্থার পরও বিএনপি আজকে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সীমিত পরিসরেও বিএনপি তার কাজগুলো করছে।’
এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন, খায়রুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ, সাবেক সাংসদ আক্তারুজ্জামান, মহানগর বিএনপির উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের রফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।