• সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
  • শীর্ষ খবর
  • 292
হবিগঞ্জের সুতাং নদ রক্ষায় হাইকোর্টের রুল

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের সুতাং নদ ও শৈলজুড়া খাল রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ৯ সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৩ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রোববার হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা জনস্বার্থমূলক এক মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে এই রুল জারি করেন। বেলা সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সমন্বয়ক ও আইনজীবী শাহ সাহেদা আখতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দূষণ এবং অবৈধ ও অননুমোদিত কার্যক্রম থেকে সুতাং নদ ও নদের সঙ্গে সংযুক্ত শৈলজুড়া খাল রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন সংবিধানবিরোধী, বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে এই রুল দেন আদালত। পাশাপাশি সুতাং নদকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ ও অন্যান্য প্রযোজ্য আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে বিবাদীদের অবৈধ ও অননুমোদিত কার্যক্রমের ফলে সংঘটিত পানি, বায়ু, মাটি ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেওয়া হয়।

সেই সঙ্গে বিবাদীদের মাধ্যমে পরিচালিত ইন্ডাস্ট্রিতে ইটিপি এবং অন্যান্য দূষণ নিরোধক যন্ত্র নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করতে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ ও পরিবেশগত ছাড়পত্রের পরিপূর্ণ অনুসরণ না করা পর্যন্ত বিবাদীদের মধ্যমে পরিচালিত ইন্ডাস্ট্রিগুলোর পরিবেশগত ছাড়পত্র স্থগিত রাখতে এবং দুই মাস অন্তর সুতাং নদ ও নদের সঙ্গে সংযুক্ত শৈলজুড়া খালের পানি পরীক্ষা এবং তিন মাস অন্তর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদালত আগামী দুই মাসের মধ্যে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের (সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়) পরিচালককে একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। বেলার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

মামলার বিবাদীরা হলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, নির্বাহী প্রকৌশলী, পানিসম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ শাখা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের (সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়) পরিচালক এবং প্রাণ–আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার ডেনিম লিমিটেড, পাইওনিয়ার ডেনিম লিমিটেড, সিলভান অ্যাগ্রিকালচার লিমিটেড, স্টার পোরসেলিন লিমিটেড, হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো লিমিটেড, হবিগঞ্জ টেক্সটাইল লিমিটেড, রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেইজ অ্যাডভান্স অ্যাগ্রো রিফাইনারিস (মার) লিমিটেড, সায়হাম নিট কম্পোজিট লিমিটেড, সান বেসিক কেমিক্যাল লিমিটেড, গ্লোরি অ্যাগ্রো লিমিটেড ও রাসা কেমিক্যাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

হবিগঞ্জের সুতাং নদের উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা। ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ সুতাং নদ হবিগঞ্জ সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, লাখাই এবং চুনারুঘাট উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। একসময় এই নদ এলাকাবাসীর যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বোরো মৌসুমে এই নদের পানি ব্যবহার করে কৃষিকাজ সম্পন্ন হয়। দেশের অন্যান্য নদ–নদীর মতো এই নদের অবস্থা আজ সংকটাপন্ন। কারণ, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুর এলাকায় সাম্প্রতিককালে অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। এসব কারখানার বর্জ্য নদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী শৈলজুড়া খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে সুতাং নদ দূষণ করছে।

অব্যাহত শিল্পবর্জ্যের দূষণে নদের পানি কালো বর্ণ ধারণ করেছে। পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। কষ্টকর হয়ে পড়েছে নদের পাড় দিয়ে চলাচল। দূষণের কারণে মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে নদটি। অপর দিকে এই নদের পানি দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় নদ অববাহিকায় বিদ্যমান বিস্তীর্ণ হাওরের বোরো ফসলের সেচকাজে ব্যবহার করতে পারছেন না কৃষকেরা। নদের পানি ব্যবহারকারীরা পড়েছেন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। আক্রান্ত হচ্ছে চর্মরোগসহ নানা অসুখে। মারা যাচ্ছে হাঁস, মুরগি ও গবাদিপশু।