- অক্টোবর ৭, ২০২১
- লিড নিউস
- 263
নিউজ ডেস্কঃ সিলেট নগরে গত ১০ বছরে শতাধিক টিলা সাবাড় হয়েছে শুধু আবাসনের প্রয়োজনে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) টিলাশ্রেণির ভূমির দাগ–খতিয়ান পর্যবেক্ষণ করে নগরী ও তার উপকণ্ঠে ১৯৯টি টিলার সংখ্যা বের করেছে। এর প্রায় অর্ধেকের অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পর্যবেক্ষণ বলছে, এই প্রবণতা চলতে থাকলে আগামী দশকের মধ্যে সিলেট নগরী টিলাশূন্য হয়ে পড়বে।
টিলাকে নগরের জন্য ‘উত্তরের প্রাকৃতিক ঢাল’ বলে মন্তব্য করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ। তিনি বলেন, যে আবাসনের প্রয়োজনে টিলা সাবাড় হচ্ছে, সেই নিরাপদ আবাসভূমির জন্য টিলার সুরক্ষা দরকার। কেননা ভূমিকম্পপ্রবণ সিলেট নগরীর জন্য টিলা হচ্ছে প্রাকৃতিক ঢাল।
আগে নগরে ঠিক কতটি টিলা ছিল, এখন কতগুলো টিকে আছে, তার নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ১৯৫৬ সালে ভূমির মাঠ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, টিলাশ্রেণির ভূমির হিসাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি জেলায় ১ হাজার ২৫টি টিলার সংখ্যা বের করেছে। এর মধ্যে নগরী ও উপকণ্ঠের এলাকা মিলিয়ে সিলেট সদর উপজেলায় টিলা রয়েছে ১৯৯টি। বেলা সিলেট অঞ্চলের সমন্বয়ক আইনজীবী শাহ সাহেদা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে দেখে গেছে, গত ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি টিলা নিশ্চিহ্ন হয়েছে বালুচর এলাকায়। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমসি কলেজের পাশের এই এলাকা বালুচর একসময় টিলা ও বনভূমির মতো ছিল। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ওঁরাওদের হটিয়ে সেখানে আটটি আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। চন্দনটিলা নামের একটি ক্ষয়িষ্ণু টিলা রয়েছে সেখানে। বসবাস করছে মাত্র ৯টি ওঁরাও পরিবার। ওঁরাও পরিবারের একজন সদস্য সারথি ওঁরাও বলেন, ‘আমরা সংগ্রাম করে আছি বলে চন্দন টিলাটি আছে। আমরা না থাকলে সেটি গুঁড়িয়ে বাসাবাড়ি হবে।’
খাদিমপাড়ার মলাইটিলা ঘিরে ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি আবাসন কোম্পানি। কৃত্রিমভাবে টিলা ধস ঘটাতে চূড়ায় পুকুরসদৃশ গর্ত খনন করা হয়। ২০১১ সালের ১৬ জুন একটি গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনের পর মলাইটিলায় এনফোর্সমেন্ট অভিযানে আবাসন কোম্পানিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে টিলার চূড়ায় গর্ত ভরাট করা হয়েছিল। ১০ বছর পর সম্প্রতি সেই মলাইটিলায় গিয়ে দেখা গেছে, টিলার চূড়ার পুকুর ভরাট হয়েছে ঠিকই। তবে টিলার চারপাশে গড়ে উঠেছে আবাসন।
গত ১০ বছরে টিলা কাটার প্রতিবেদন সূত্রে সরেজমিন অনুসন্ধান ও বসবাসকারীদের হিসাবে ৫৭টি টিলা একেবারে নিশ্চিহ্ন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সাবাড় করার মুখে রয়েছে আরও ৫০টি টিলা। অবশিষ্ট টিলাগুলো আগামী ১০ বছর পর থাকবে কি না, এমন সংশয় খোদ টিলা এলাকার বাসিন্দারাই প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, নগরী বা আশপাশ এলাকায় মানুষ জমি কেনে বাসাবাড়ি করার জন্য। টিলা থাকলে জমির উচ্চমূল্য পাওয়া যায় না। এ জন্য জরিমানা দিয়েও টিলা সমান্তরাল করা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, নগরী ও আশপাশ এলাকার পাহাড়-টিলার রক্ষায় সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পদক্ষেপ জরুরি।
সমন্বিত পদক্ষেপে টিলার সুরক্ষায় শৃঙ্খলা আসবে বলে মনে করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, বাসাবাড়ি নির্মাণ নকশার অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে টিলাশ্রেণির ভূমি দেখলেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ অবশ্য টিলাশ্রেণির ভূমিতে বাসাবাড়ি নির্মাণ নকশার অনুমোদন দেওয়া বন্ধ রেখেছে।