• ডিসেম্বর ৩, ২০২১
  • মৌলভীবাজার
  • 402
হাকালুকি হাওরে হিজল-করস কেটে বোরোর চাষ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ হাকালুকি হাওরের মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মালাম বিল এলাকায় সরকারি খাসজমিতে বোরো ধান চাষ করতে হিজল-করসসহ জলজ গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাকালুকি হাওর একটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা।

এ ঘটনায় বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের হাল্লা ফরেস্ট ক্যাম্পের জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেবনাথ বড়লেখা থানায় গতকাল বৃহস্পতিবার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, ২০০৩ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওর এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে হিজল, করসসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ রোপণ করা হয়। বৃক্ষ রক্ষণাবেক্ষণেরও কাজ চলছে। হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ পাশে ও সাতবিলার উত্তর পাশের প্রায় ৫ একর জমি থেকে হিজল-করসসহ জলজ বৃক্ষ কেটে ধান চাষের জন্য জমি তৈরি করার তথ্য পান বন বিভাগের হাল্লা ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত ৩০ নভেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ওই কর্মকর্তা দেখতে পান, মালাম বিলের দক্ষিণ পাশে ও সাতবিলার উত্তর পাশে হিজল-করসসহ জলজ গাছ উপড়ে ফেলে ধান চাষের উপযোগী জমি তৈরি করা হচ্ছে। এতে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার গাছ ধ্বংস করে পরিবেশের ক্ষতি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের কাজিরবন্দ গ্রামের পারভেজ আহমদ, রিয়াজ আলী, নাজিম উদ্দিন, গফুর উদ্দিন, হান্নান, জয়নাল, মোশাইদ আলী এবং ছালিয়া গ্রামের মালেক ও সুরুজ আলী।

ওই লিখিত অভিযোগ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মালাম বিলের দক্ষিণ পাশে ও সাতবিলার উত্তর পাশে হিজল-করসসহ জলজ গাছ কেটে ওই এলাকায় ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করা হয়েছে। জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। আবার বোরো ধান চাষের জন্য ট্রাক্টর দিয়ে জমি তৈরি করা হচ্ছে। রোপণ করা ছাড়াও হাওরের পতিত জমিতে প্রাকৃতিকভাবেও অনেক গাছ বেড়ে ওঠে। সাত মাস আগে হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমি থেকে কয়েক হাজার গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর মামলাও করেছিল।

হাল্লা ফরেস্ট ক্যাম্পের জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেবনাথ আজ শুক্রবার বলেন, ‘আমি গাছ কেটে জমি তৈরির খবর পেয়েছি ২৭ নভেম্বর রাতে। পরদিন ২৮ নভেম্বর নির্বাচন থাকায় যেতে পারিনি। ৩০ নভেম্বর ঘটনাস্থলে যাই। দেখি, মালাম বিলের পাশের গ্রাম কাজিরবন্দের কিছু লোক গাছ কেটে জমি সমান করে ধান লাগিয়ে ফেলছেন। তাঁরা আমাকে হুমকি-ধমকিও দিয়েছেন।

আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। থানায় ৯ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এ বছরের মে মাসেও কয়েক হাজার জলজ গাছ ধ্বংস করে ট্রাক্টর দিয়ে জমি তৈরি করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, তিন থেকে চার হাজার হিজল-করসসহ জলজ গাছ কাটা হয়েছে। এসব গাছ ২ থেকে ১০ ফুট লম্বা ছিল। এর মধ্যে ১০ ফুট উচ্চতার ৫০০ থেকে ৬০০ গাছ আছে। এসব গাছের শিকড়সহ তুলে ফেলা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা শুক্রবার বলেন, ‘গাছ কেটে জমি তৈরির খবর পেয়েছি। কাল শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাব।’

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার শুক্রবার বলেন, ‘মালাম বিলের পাশে সরকারি যে জায়গা আছে। এই জায়গা থেকে ওই এলাকার কিছু লোক কিছু গাছ কাটছেন চাষাবাদ করার জন্য। এটি ঠিক করেননি। এ বিষয়ে ফরেস্টের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। পরিবেশের যাতে কোনো বিপর্যয় না হয়, সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’