• ডিসেম্বর ১৪, ২০২১
  • লিড নিউস
  • 355
চেম্বার নির্বাচন: ‘মামলা করবে’ সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ

নিউজ ডেস্কঃ সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন নিয়ে জট কাটছে না সহসাই। বরঞ্চ জট আরও জটিল হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। চেম্বারের প্রেসিডিয়াম থেকে ‘ছিটকে পড়া’ সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচন নিয়ে মামলার ইঙ্গিত দিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর জিন্দাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টের হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিলেট সম্মিলিত পরিষদ থেকে নির্বাচিত পরিচালক আব্দুর রহমান জামিল বলেন, চেম্বারের যে প্রেসিডিয়াম গঠন করা হয়েছে, এর বিরুদ্ধে আজ বিকালে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের কাছে আপিল করা হবে। আপিলে বিষয়টির সুরাহা না হলে তারা মামলার দিকে এগোবেন।

‘সিলেট চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছিল’ বলেও মন্তব্য করেন জামিল।

গত শনিবার সিলেট চেম্বারের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নির্বাচনে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে সমান ১১ জন করে পরিচালক নির্বাচিত হন। কোনো প্যানেলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় প্রেসিডিয়াম গঠন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। গতকাল সোমবার বিকাল ৩টায় প্রেসিডিয়াম গঠনের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল।

চেম্বার সূত্র জানায়, ভোটের জন্য সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতি পদে প্রার্থীদের নাম গত রোববার নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের কাছে জমা দেয় উভয় প্যানেল। এক্ষেত্রে একই পরিচালকের নাম একাধিক পদেও জমা দেওয়া হয়েছে। সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ সভাপতি পদে আবু তাহের মো. শোয়েব (বিদায়ী সভাপতি), তাহমিন আহমদ ও ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদের নাম দেয়। বিপরীতে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ সভাপতি পদে একমাত্র আব্দুর রহমান জামিলের নাম জমা দিয়েছে।

সিনিয়র সহসভাপতি পদে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ তাহমিন আহমদ ও ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদের নাম জমা দেয়। আর সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ দেয় জিয়াউল হকের নাম। সহসভাপতি পদে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ মো. আতিক হোসেন এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ হুমায়ূন আহমদের নাম জমা দেয়।

প্রেসিডিয়াম গঠন নিয়ে সোমবার উত্তেজনা দেখা দেয় উভয়পক্ষের মধ্যে। সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদ নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের কাছে একটি অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচনে দুটি শ্রেণি থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রেসিডিয়ামের তিনটি পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে নির্বাচিত অর্ডিনারি শ্রেণির প্রার্থী আব্দুর রহমান জামিল ও হুমায়ুন আহমদ যথাক্রমে সভাপতি ও সহসভাপতি পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু চেম্বারের সংঘবিধি অনুসারে, এ দুটি পদে দুটি ভিন্ন শ্রেণি থেকে নির্বাচিতরা প্রার্থী হতে পারবেন।

কাল রাতে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড জানায়, তাহমিন আহমদের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে চেম্বারের সংঘবিধির ১২ (বি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আব্দুর রহমান জামিল ও হুমায়ুন আহমদের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়।

নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড সভাপতি পদে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদকে সভাপতি ও আতিক হোসেনকে সহসভাপদি পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে। এ ছাড়া একই প্যানেল থেকে সিনিয়র সহসভাপতি পদে ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বিজয়ী হন।

সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ এই প্রেসিডিয়াম নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে।

সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয় সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ। পরিষদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রহমান জামিল বলেন, ‘প্রেসিডিয়াম নির্বাচনে নির্বাচিত পরিচালকদের মধ্যে যে কেউ প্রেসিডিয়ামের যে কোন পদে পৃথক পৃথকভাবে প্রার্থী হতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় উক্ত নির্বাচনে বিভিন্ন গ্রুপ থেকে সভাপতি পদে ২ জন, সিনিয়র সহসভাপতি পদে ২ জন ও সহসভাপতি পদে ২ জন করে মোট ৬ জন সদস্য পৃথকভাবে মনোয়নপত্র ক্রয় করে দাখিল করেন।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী পরিচালনা বোর্ড প্রেসিডিয়াম গঠনের লক্ষে গত সোমবার ৩টায় সভা আহ্বান করেন। উক্ত সভাতে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিল জানান যে, সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি এবং সহসভাপতি পদে উপরে বর্ণিত ৬ জন ব্যতীত আরো অনেক প্রার্থী মনোয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে তারা প্রত্যাহার করে নেন। নবনির্বাচিত পরিচালক ও প্রেসিডিয়ামের সিনিয়র সহসভাপতি পদপ্রার্থী জিয়াউল হক নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান, কে কে মনোয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন এবং এই পর্যায়ে মনোয়নপত্র প্রত্যাহরের কোন সুযোগ আছে কিনা? তখন নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান এর কোন উত্তর প্রদান করতে পারেননি।’

আব্দুর রহমান জামিল আরও বলেন, ‘অতপর নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান সভাপতি পদে তাহমিন আহমদ ও আব্দুর রহমান জামিল, সিনিয়র সহসভাপতি পদে জিয়াউল হক ও ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ এবং সহসভাপতি পদে হুমায়ূন আহমদ ও মো. আতিক হোসেনের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেন। উপস্থিত পরিচালকগণ গোপন ব্যালট বা সরাসরি মতামতের ভিত্তিতে প্রেসিডিয়াম গঠনের কথা ব্যক্ত করেন। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড কিছু সময় প্রদান করে বলেন যে, আপনারা আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডকে জানান যে, গোপন ব্যালটের মাধ্যমে বা উপস্থিত সকল পরিচালকের মতামতের ভিত্তিতে নাকি হাত উত্তোলনের মাধ্যমে প্রেসিডিয়াম নির্বাচন করবেন। তিনি (জলিল) আরো জানান যে, ইতিমধ্যে তাহমিন আহমদ একটি লিখিত আপত্তি নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড বরাবরে প্রদান করেছেন। উক্ত আপত্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোন ধরনের ব্যাখ্যা প্রদান করেননি।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান সন্ধ্যা ৭টায় হঠাৎ করে রাত ৯টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়া মুলতবি ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে মুলতবি সভা শুরু করা মাত্রই প্রেসিডিয়াম নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অগ্রসর না হয়েই বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করে আনুমানিক রাত ১০টায় সংঘবিধির অজুহাতে সভাপতি পদে আব্দুর রহমান জামিল ও সহসভাপতি পদে হুমায়ূন আহমদের প্রার্থীতা বাতিল করে পূর্বেই লিখে রাখা রায় প্রদান করেন। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থি।’

আব্দুর রহমান জামিল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, প্রেসিডিয়াম নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রুপের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে প্রেসিডিয়াম গঠন হল কিনা তা কারো পক্ষে বুঝার কোন সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় নির্বাচনী বোর্ড কিসের ভিত্তিতে ২টি মনোনয়ন বাতিল করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। নির্বাচনী বোর্ডের এহেন অযৌক্তিক, অন্যায়ভাবে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করে একতরফাভাবে মননোয়ন বাতিলের সিদ্ধান্তে সিলেটের সাধারণ ব্যবসায়ী সমাজ মর্মাহত হয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের নির্বাচিত পরিচালক হুমায়ূন আহমদ, জহিরুল কবির চৌধুরী, দেবাংশু দাস মিঠু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।