- ডিসেম্বর ২২, ২০২১
- শীর্ষ খবর
- 351
নিউজ ডেস্কঃ বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম। তার অনুরোধ, ইন্টারপোলের মাধ্যমে যেন রায়হান হত্যা মামলার পলাতক আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
আজ বুধবার রায়হান হত্যা মামলার শুনানিতে আদালতে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে এই অনুরোধ জানান তিনি। এ মামলার কার্যক্রম যেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হয়, সেই দাবিও জানিয়েছেন সালমা বেগম।
রায়হান হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ৬ জন। তন্মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য কারান্তরীণ। অপর আসামি কোম্পানীগঞ্জের আব্দুল্লাহ আল নোমান পলাতক। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি নোমানের অবস্থান জানার চেষ্টা করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারত হয়ে আরও কয়েকটি দেশ ঘুরে বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। সেখানে নাগরিকত্ব পাওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন তিনি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারক আমিরুল ইসলাম রায়হান হত্যা মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেন। বাদীপক্ষ চার্জশিটের বিপক্ষে নারাজি দেয়নি। আদালত পলাতক নোমানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি ও তার মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন। গত ৫ ডিসেম্বর এই গ্রেফতারি পরোয়ানা ও তার মালামাল ক্রোকের বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য্য ছিল। কিন্তু পুলিশের কাছ থেকে সেদিন পরোয়ানার প্রতিবেদন না পাওয়ায় শুনানি পিছিয়ে আজ বুধবার (২২ ডিসেম্বর) তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
আজ শুনানি শেষে নোমানকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এমএ ফজল চৌধুরী জানান, কমপক্ষে দুটি পত্রিকায় নোমানের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাপানো হবে। এর মাধ্যমে তাকে অবহিত করা হবে যে, তিনি আদালতে হাজির না হলে তার অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য শুরু হবে।
এদিকে, শুনানির জন্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন রায়হানের মা সালমা বেগম। শুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, “আমার দাবি হচ্ছে, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে রায়হান হত্যার বিচার হোক। আমি আশা করবো, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার রায়হানের খুনিদের বিচার শুরু হোক। আপনারা দেখেছেন, ঢাকায় আবরার হত্যা হয়েছিল। এ মামলায় আসামি ছিল ২৫ জন। ২০ জনের ফাঁসির রায় হয়েছে, ৫ জনের যাবজ্জীবন। রায়হান হত্যা মামলার আসামি ৬ জন। এ ৬ জনেরই যাতে ফাঁসি হয়, এজন্য আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। এরা যদি (কারাগার থেকে) বের হয়ে যায়, প্রথমে তো আমাকে মারবেই, আরো জনগণকে মারবে।”
সালমা বেগম বলেন, “নোমানের মালামাল ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। নোমান যেভাবে পলাতক হয়েছে, তার মালগুলোও পলাতক! এখন আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়গণকে অনুরোধ করবো, রাজন হত্যা মামলার আসামিকে যেভাবে সৌদিআরব থেকে দেশে ফেরত আনা হয়েছিল, সেভাবে নোমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা হোক।”
শুনানির জন্য আজ আদালতে রায়হান হত্যার প্রধান আসামি বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদকে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে ফের তাদেরকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গেল বছরের ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট শহরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি সেখানে মারা যান। পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্তে প্রথমে পুলিশ ছিল। পরে সে বছরের ১৩ অক্টোবর মামলাটি স্থানান্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। চলতি বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
যে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়, তাদের পাঁচজনই পুলিশ সদস্য। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ। অভিযুক্ত অপরজন আব্দুল্লাহ আল নোমান, যার বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে।
এদিকে, পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তার শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
রায়হান হত্যা ঘটনার পর পালিয়ে যান এসআই আকবর। পরে গেল বছরের ৯ নভেম্বর দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন, ১০ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চান তদন্ত কর্মকর্তা; আদালত সাত দিনের আবেদনই মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ১৭ নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত আকবরকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।