• এপ্রিল ৬, ২০২২
  • শীর্ষ খবর
  • 268
জগন্নাথপুরে গভীর রাতে দুই বাঁধে ফাটল, স্বেচ্ছাশ্রমে রক্ষা

জগন্নাথপুর প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরের দুটি ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। পরে মসজিদের মাইকে বেড়িবাঁধ রক্ষার জন্য আহ্বান জানানো হলে কয়েকশ কৃষকের স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ দুটি আপাতত রক্ষা পেয়েছে।

এতে নলুয়ার হাওরের ১০ হাজার হেক্টর জমির আধা পাকা ফসল এখনো অক্ষত।নলুয়ার হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত দুটি বেড়িবাঁধ হলো হাওরের ভূরাখালী এলাকার ৬ নম্বর প্রকল্পের আওতাধীন ভূরাখালী বেড়িবাঁধ ও ২০ নম্বর প্রকল্পের আওতাধীন কলকলিয়া ইউনিয়নের গোড়ারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের বেড়িবাঁধ।

কৃষক, এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ভূরাখালী এলাকার ৬ নম্বর প্রকল্পের আওতাধীন বেড়িবাঁধের কাজের মান সন্তোষজনক না হওয়ায় এটি বেশ কিছুদিন ধরে ঝুঁকিতে আছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন ধীরগতিতে দায়সারা কাজ করায় বাঁধটি ঝুঁকিমুক্ত হচ্ছিল না।

এর মধ্যে গতকাল দিবারাত একটার দিকে হঠাৎ করে বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এ সময় ভূরাখালী গ্রামের মসজিদ থেকে বেড়িবাঁধ রক্ষার জন্য আহ্বান জানানো হয়। পরে আশপাশের কয়েক গ্রামের কমপক্ষে ২০০ কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে বেড়িবাঁধটি রক্ষা করেন।

একই ভাবে গোড়ারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের বেড়িবাঁধে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফাটল দেখা দেয়। পরে মসজিদের মাইকের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্থানীয় চার শতাধিক মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধটি রক্ষা করেন।

মজিদপুর গ্রামের কৃষক নুরুল হক বলেন, গোড়ারগাঁও গ্রামের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ সঠিকভাবে না হওয়ায় গত সোমবার বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছিল। ওই সময়ও এলাকার লোকজন বাঁধটি রক্ষায় স্বেচ্ছায় কাজ করেছেন। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এরপরও বাঁধ রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে গত রাতে আবার ফাটল দেখা দেওয়ায় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় কোনোরকমে বাঁধটি রক্ষা করা গেছে। এ সময় স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে বাঁশ, বস্তা ও মাটি ফেলার কাজ করেছেন বলে তিনি দাবি করেছেন।

চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, নলুয়ার হাওর জেলার অন্যতম বড় হাওর। এ হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোনো গাফিলতি মেনে নেওয়া যায় না। পাউবো ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির লোকজন দায়ভার এড়াতে পারেন না।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অর্জুন দাশ বলেন, ‘সাত জায়গায় খালের মুখ বন্ধের জন্য বরাদ্দ হয় মাত্র তিন লাখ টাকা। বিল পেয়েছি দেড় লাখ টাকা। বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে বেশি কাজ করেছি।’

নলুয়ার হাওরের ৬ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জহিরুল হক বলেন, প্রকল্পটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় অবস্থিত। তবে বেড়িবাঁধ রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কাজে কোনো ধরনের গাফিলতি নেই বলে তিনি দাবি করেন।

পাউবো জগন্নাথপুর উপজেলার মাঠ কর্মকর্তা হাসান গাজী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত পানির চাপে বাঁধে ফাটল ও ধসের ঘটনা ঘটেছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম বলেন, হাওরের ফসল রক্ষায় কৃষকদের স্বেচ্ছাশ্রমে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সবাই অভিভূত। এলাকার সবাই কৃষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সবাই মিলে বেড়িবাঁধ রক্ষার মাধ্যমে ফসল উত্তোলনের চেষ্টায় এখন আশার আলো দেখা যাচ্ছে।