- এপ্রিল ২৪, ২০২২
- শীর্ষ খবর
- 285
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরের একটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে। এটি জেলার একটি অন্যতম বড় ফসলি হাওর। এ হাওরে ৩টি জেলার ৪টি উপজেলার প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমি আছে।
স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, আজ সকাল সাতটার দিকে হাওরের মাউতি এলাকার বাঁধের নিচ দিয়ে প্রথমে ছুঁইয়ে পানি প্রবেশ করে। পরে বাঁধটি ভেঙে যায়। ভাঙার পর কৃষকেরা হাওরে ছুটতে থাকেন।
শাল্লা উপজেলার সদরের বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিশ্বজিত চৌধুরী জানান, এটি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ছিল না। পিআইসির লোকজনের অবহেলার কারণে বাঁধটি ভেঙেছে। সোমবার রাতে বৃষ্টি হয়েছে। তখন বাঁধে ছিদ্র দেখা দেয়। বাঁধে কোনো পাহারাদার ছিল না। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে সকালে বাঁধটি ভেঙে যায়।
শাল্লার ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস জানান, বাঁধে তদারকি কম ছিল। এ হাওরে সুনামগঞ্জের শাল্লা ও দিরাই, কিশোরগঞ্জের ইটনা এবং নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার মানুষের ফসল রয়েছে। বাঁধ ভাঙায় জমির ৫০ শতাংশ ফসলের ক্ষতি হবে। এর মধ্যে হাওরে কেটে রাখা ধানও আছে।
তরুণ কান্তি দাস বলেন, আফসোস হচ্ছে, নদীর পানি কমেছে। পরিস্থিতি যখন উন্নতির দিকে, তখন বাঁধটি ভাঙল। এ হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ যেসব স্থান ছিল, সেদিকে বাঁধ ভাঙেনি। যেখানে ভেঙেছে, সেখানকার পিআইসির উদাসীনতার কারণেই কৃষকের ক্ষতি হলো।
উপজেলার ঘুঙ্গিয়ার গাঁও গ্রামের বাসিন্দা বেনীমাধব তালুকদার (৬৯) জানান, হাওরে তাঁর ১৩ একর জমি ছিল। অর্ধেক ধান কাটা হয়েছে। সেগুলো হাওরে আছে। বাঁধ ভাঙায় এখন কাটা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কৃষক বেনীমাধব তালুকদার বলেন, ‘যে জমি কাটতে পারিনি, সেগুলো তো গেছেই। আর যেসব ধান কেটে হাওরে রাখছি, সেগুলো কীভাবে বাড়িতে আনব—এ নিয়ে সমস্যায় আছি। যেভাবে পানি ঢুকছে, সন্ধ্যার মধ্যেই হাওর ডুবে যাবে।’
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, এখানে যাকে কাজ দেওয়া হয়েছে, সেটির পিআইসি নম্বর ৮১। এ কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে বাঁধে দেখা যায়নি। সভাপতি কৃপেন্দ্র কুমার দাশ সিলেটে থাকেন। তিনি কৃষকও নন।
বাঁধ ভাঙার পর দ্রুত ধান কাটার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেবের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। ইউএনও বলেন, হাওরের শাল্লা অংশে ৪ হাজার ৬৩৭ হেক্টর জমি আছে। এসব জমির ধান কাটা প্রায় শেষ। তারপরও যেসব ধান আছে, সেগুলো দ্রুত কাটতে মাইকিং করা হচ্ছে। বাঁধে রাতে পাহারাদার ছিল বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাতে যখন ঝড়বৃষ্টি হয়, তখন সেখানে লোক ছিল না। বাঁধে আমাদের তদারকি ছিল। কিন্তু যেখানে ভেঙেছে, সেখানটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। বুঝতে পারছি না, এখানে বাঁধটা কীভাবে ভাঙল?’
সুনামগঞ্জে এবার প্রথম দফা পাহাড়ি ঢল আসে ৩০ মার্চ। এতে জেলার নদ-নদী ও হাওরে ব্যাপক পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পায়। ঝুঁকিতে পড়ে জেলার সব হাওরের বোরো ধান। হাওরের বাঁধ রক্ষায় ২২ দিন ধরে কৃষকদের নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) লোকজন। কৃষি বিভাগের হিসাবমতে, এ পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে ঢলের পানি ঢুকে ১৯টি ছোট–বড় হাওর ও বিলের প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।