• এপ্রিল ২৬, ২০২২
  • মৌলভীবাজার
  • 488
সামান্য ঝোড়ো বাতাসেই বিদ্যুৎ উধাও, ভোগান্তি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারে সামান্য ঝোড়ো বাতাসেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনা বেড়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। এ ছাড়া দিন-রাত মিলিয়ে অনেকবারই হুট করে বিদ্যুৎ চলে যায়। তবে কখনো এক-দেড় মিনিটের মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে আসে। আবার কখনো বেশ সময় ধরেই বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতের এমন আসা-যাওয়া নিয়ে শহরের অনেক গ্রাহকই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন রকম মন্তব্য করছেন।

গত রোববার রাত ১২ থেকে বিদ্যুৎ না থাকার কথা জানিয়ে সৈয়দ আমিন লিখেছেন, ‘মৌলভীবাজারে কয়েক মিনিটের বাতাসে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ উধাও হয়ে যায়।’

একই রাতে (গত রোববার) নুরুর রহমান লিখেছেন, ‘ঝড় নেই বৃষ্টি নেই। তারপরও বিদ্যুৎ নেই। দুর্ভাগা মৌলভীবাজার।’ এ রকম আরও অনেকেই নানা রকম কথা লিখেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সাংস্কৃতিক সংগঠক বলেন, ‘দুই মাস ধরে বিদ্যুতের সমস্যাটা বেশি হচ্ছে। আমরা আইপিএস ব্যবহার করতে পারি না। যাঁদের আইপিএস আছে, তাঁরা কখন বিদ্যুৎ আসে, কখন যায় বুঝতে পারেন না।’

কয়েকজন বিদ্যুৎ গ্রাহক ও স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছুদিন ধরে মৌলভীবাজার শহর ও শহরতলিতে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার ঘটনা বেড়ে গেছে। দিন-রাত মিলিয়ে দুই-তিনবার, কখনো সাত-আটবার, আবার কখনো তারও বেশিবার হুট করে বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুতের এই আসা-যাওয়া বেড়েছে ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম শুরু হতেই। সামান্য ঝোড়ো হাওয়া দিলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। অনেক সময় স্থানীয়ভাবে ঝড়-বৃষ্টি না হলেও বিদ্যুৎ থাকে না। রোববার মধ্যরাত ও ভোররাতে বেশ সময় ধরে বিদ্যুৎ ছিল না। গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত দুইবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান ১৮ এপ্রিল বলেছিলেন, ‘বিদ্যুৎ-বিভ্রাট মারাত্মক বাড়ছে। বাতাস দিলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ করছি। তারা বলে, বিদ্যুতের লাইনের ওপর গাছ পড়ছে, বাঁশ পড়ছে। এ কারণে বিদ্যুৎ চলে যায়।’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্র জানায়, ঝড়-বৃষ্টির সময় ৩৩ কেভির লাইনে বাঁশ ও গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। মৌলভীবাজার শহরে বিদ্যুৎ আসে শ্রীমঙ্গল গ্রিড সাবস্টেশন এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ গ্রিড সাবস্টেশন থেকে। শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার লাইনের দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার এবং মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ লাইনের দূরত্ব হচ্ছে ৪০ কিলোমিটার। এই লাইন দুটি এসেছে পাহাড়, গ্রাম ও হাওরের মধ্য দিয়ে। ঝড়-বৃষ্টি দিলে লাইনের ওপর বাঁশ ও গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া এই অঞ্চলে বজ্রপাত বেশি হয়ে থাকে। বজ্রপাতে লাইনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে। মৌলভীবাজারে গ্রিড সাবস্টেশন না থাকায় এই সমস্যা বেশি হচ্ছে।

বিউবো জানিয়েছে, বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়ক-সংলগ্ন শহরতলির রায়শ্রীতে সাবস্টেশন নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। কাজ শেষ হতে আরও বছর দুয়েক সময় লাগবে। তার আগে সমস্যা সমাধানে মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের কদমহাটা থেকে চাঁদনীঘাট পর্যন্ত নতুন একটি লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এই লাইন স্থাপিত হলে অন্তত ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের সমস্যা কমবে।

বিউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল বাহার গত ১৮ এপ্রিল বলেন, মেইনটেন্যান্স থাকায় শহরে অভ্যন্তরীণ লাইন স্বাভাবিক আছে। ৩৩ কেভি লাইনে সমস্যা হচ্ছে। অনেক লম্বা লাইন। ঝড়ে বাঁশ ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে লাইনে ট্রিপ করে। বছরে চার-পাঁচবার বাঁশ-গাছ কাটা হয়। খুব একটা লাভ হয় না। বাতাস দিলে অনেক দূর থেকে বাঁশ এসে লাইনে বাড়ি মারে। লাইন করার সময় খালি ছিল। ১২-১৩ বছরে গাছ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রচুর বজ্রপাত হয় এই এলাকায়।