• মে ২০, ২০২২
  • লিড নিউস
  • 465
৩১ বছর পর জকিগঞ্জের তিন নদীর মোহনায় ডাইকে ভাঙন

নিউজ ডেস্কঃ ভারতের পাহাড়ের তীব্র ঢলে সিলেটের জকিগঞ্জের অমলশীদে ৩ নদীর মোহনায় মধ্যরাতে ভেঙে গেছে ডাইক। উপজেলার রক্ষাকবচ বাধটি স্থানীয়রা রাতে গাছ ফেলেও রক্ষায় ব্যর্থ হন।

ফলে রাতেই জনগণকে মাইকিং করিয়ে সতর্ক করে দেন স্থানীয় বারোঠাকুরী ইউপি চেয়ারম্যান।

বরাকের তীব্র স্রোতে পানি এসে ঢুকছে লোকালয়ে। সময় যত গড়াচ্ছে বাধ ভেঙে তত প্রশস্ত হচ্ছে। ভরা বন্যায় ভারত থেকে বরাক নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এখন সরাসরি প্রবেশ করছে জকিগঞ্জের বারঠাকুরী এলাকা দিয়ে।

এরইমধ্যে ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অথচ এরআগে বন্যায় মাত্র একটি গ্রাম প্লাবিত ছিল। ডাইক ভেঙে আশপাশের ইউনিয়নগুলোতেও পানি ঢুকছে। বর্তমানে উপজেলার সব ক’টি এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ১৯৯১ সালের পর দ্বিতীয় বারের মতো বাধে ভাঙন দেখা দিলো।

এমনটি জানিয়ে জকিগঞ্জের বারোঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯১ উজানের পাহাড়ি ঢলে বাধ ভেঙেছিল। দীর্ঘ ৩১ বছর পর আবারো বাধে ভাঙন দেখা দিলো।

তিনি বলেন, রাতে জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে বাঁশ-গাছ ফেলেও বাধ রক্ষার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। বরাকের প্রখর স্রোতে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সময় যত যাচ্ছে, বাধ ভেঙে প্রশস্ততা বাড়ছে। এ যাবত ভাঙনকৃত এলাকা প্রায় ৬০ ফুটেরও বেশি প্রশস্ত হয়েছে। তার ইউনিয়নে বন্যায় একটি গ্রামের কিছু অংশ প্লাবিত ছিল। এখন পুরো ইউনিয়নের সব ক’টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানি অন্যান্য ইউনিয়নে ঢুকছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা এসিল্যান্ড পল্লব হোম দাস বলেন, ডাইক ভেঙে বরাকের পানি সরাসরি বারোঠাকুরী হয়ে জকিগঞ্জ প্রত্যন্ত এলাকায় ঢুকছে। এ কারণে সুরমা-কুশিয়ারা পানি কিছুটা কমেছে। এ যাবত উপজেলার ২৯৪ গ্রামের মধ্যে দেড় শতাধিক গ্রাম বন্যা ও ডাইক ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। তাই আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩১টি করা হয়েছে। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে না গিয়ে তাদের স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। উপজেলা জুড়ে বানবাসী মানুষের সংখ্যা দেড় লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে। এ যাবত বন্যা কবলিতদের জন্য ২৪ মেট্টিকটন চাল ও ১ লাখ টাকা ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।

স্থানীয় বারোঠাকুরী এলাকার বাসিন্দা বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম আল রণি বলেন, ‘আমাদের বাড়িটি অনেক উঁচুতে। বন্যায় গ্রামের পর গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাড়িতে পানি উঠে না। ২০০৪ সালের বন্যায়ও আমাদের বাড়িতে পানি উঠেনি। কিন্তু অমলীদের ডাইক ভেঙে পানিতে এখন বাড়ি পানিতে তলিয়েছে। এরআগে ১৯৯১ সালে ডাইকটি ভাঙার তথ্য জানতেন তিনি।

এদিকে, তিন নদীর মোহনায় ডাইক ভাঙনের স্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এবং জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডাইকটি স্রোতের তোড়ে ভেঙে যায়। ঘটনার পর বারোঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডাইক ভাঙার খবর এলাকায় প্রচার করেন। ডাইক ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে বারোঠাকুরী, খাসিরচক, খাইরচক, বারোঘাট্টা, সোনাসার এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। দিনে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে বরাকের পানি সরাসরি জকিগঞ্জে প্রবেশ করছে।

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, ডাইক ভাঙার কারণে সুরমা-কুশিয়ারার পানি আপাতত কমছে। কিন্তু পরবর্তীতে আবারও বাড়তে পারে। ফলে নদী তীরবর্তী জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট শহরে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে জকিগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে অমলশিদ যাতায়াতের রাস্তাটিও পানিতে ডুবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে এ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ আছে।

সিলেট থেকে প্রায় ৯২ কিলোমিটার দূরে জকিগঞ্জের অবস্থান। এটি জেলার সবচেয়ে দূরবর্তী সীমান্ত উপজেলা। ভারতের করিমগঞ্জ জেলার বরাক নদের দুটি শাখা হচ্ছে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদী। এদের মিলনস্থল হচ্ছে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারোঠাকুরী ইউনিয়নের অমলশিদ এলাকা। উজানের নেমে আসা পানি অমলশিদে ডাইকে সরাসরি আঘাত করে। এরপর পানি ভাগ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারায় প্রবাহিত হয়। এই পানিই মূলত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মাধ্যমেই বিভাগের প্রায় শতাধিক নদ-নদীতে পানি প্রবাহিত হয়। এখন ডাইক ভেঙে যাওয়ায় পানি কোনো বাধা না পেয়ে তীব্র গতিতে সরাসরি সুরমা ও কুশিয়ারায় না গিয়ে এলাকায় ঢুকছে। ফলে পুরো সিলেট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।