- মে ২২, ২০২২
- শীর্ষ খবর
- 248
নিউজ ডেস্কঃ কাজল মিয়ার বাড়ি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদসংলগ্ন। গত মঙ্গলবার সকালে নদের পানি উপচে ঘরে প্রবেশ করে। দুপুরের মধ্যে সেটি কোমরপানিতে পৌঁছায়। পানি বাড়তে থাকায় ঘরে থাকা আসবাব খাটের ওপর তুলে রেখে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক স্বজনের বাড়িতে। সেখানে পাঁচ দিন থাকার পর রোববার সকালে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
রোববার বেলা দুইটার দিকে উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামে কাজল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের বেড়া দেওয়া ঘরটির মেঝেতে স্থানে স্থানে এখনো কিছু পানি জমে আছে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসব স্থানে বালু–মাটি ফেলছেন কাজল মিয়া। নদের পানি ঘরে প্রবেশ করায় টিনের নিচের মাটিও সরে গেছে। সেখানেও মাটি দিয়ে লেপে দিতে হচ্ছে।
কাজল মিয়া বলেন, ‘আর কত দিন মানুষের বাড়িতে থাকমু। খাই আর না খাই ঘর তো ঘরই। ঘরতনে পানি নামছে, এখন তনে ঘরেই থাকমু।’
ঘর মেরামতে ব্যস্ত থাকা কাজল মিয়া সোমবার থেকে কীভাবে সংসার চালাবেন সেটি নিয়েও চিন্তিত। তিনি বলেন, হাতে কিছু টাকা ছিল, সেগুলোও খরচ হয়ে গেছে। বন্যার মধ্যে কাজেও যেতে পারেননি। আরও কয় দিন কাজ পাবেন বলেও মনে হয় না। এদিকে ঘরের যে অবস্থা, মেরামত করতে আরও কিছুদিন লাগবে।
কাজল মিয়া বলেন, ত্রাণ সহায়াতা দেওয়া হচ্ছে, তবে সেটি পর্যাপ্ত নয়। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে সহায়তা চান।
কাজল মিয়ার মতো চানপুর গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ধলাই নদের পানি উপচে প্রবেশ করেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা বাড়িতে ফিরছেন। এখন ঘরে জমে থাকা পানি ও ঘরের মেঝে পরিচ্ছন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের ১৪৯টি গ্রামের মধ্যে ১৩৩টি গ্রাম বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলায় ৪৬ হাজার ৫০০ জন মানুষ বন্যার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বানভাসি মানুষের জন্য ৪৪ মেট্রিক টন চাল, ৮০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী, নগদ ১ লাখ টাকা এবং শিশুখাদ্যের জন্য ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে উপজেলা পরিষদ থেকে আরও ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে ২০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা এবং গোখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকার চাহিদাপত্র জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে।
কমছে নদীর পানি
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবারের তুলনায় সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমেছে। গত শনিবারের তুলনায় রোববার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে দশমিক ০৯ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। এখানে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। রোববার দুপুর ১২টায় ওই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ১৩ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার। সিলেট পয়েন্টে গত শনিবারের তুলনায় পানি কমেছে দশমিক ০৪ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। রোববার দুপুর ১২টায় ওই পয়েন্টে পানি ছিল ১০ দশমিক ৯১ সেন্টিমিটার।
এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে শনিবারের তুলনায় রোববার পানি কমেছে শূন্য দশমিক ০৮ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে রোববার দুপুর ১২টায় নদীর পানি ছিল ১৩ দশমিক ৫১ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ১৩ দশমিক ৫১ সেন্টিমিটার।