- মে ২৮, ২০২২
- শীর্ষ খবর
- 270
নিউজ ডেস্কঃ সিলেটের বালাগঞ্জে ইটভাটার ব্যবস্থাপক ধীরাজ পাল হত্যার এক বছরেও রহস্য উদঘাটন হয়নি। জমা পড়েনি মামলার অভিযোগপত্র। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিহতের পরিবার।
গত বছরের ২৮ মে উপজেলার গহরপুরে নিজ কর্মস্থলে খুন হন সেখানকার একটি ইটভাটার ব্যবস্থাপক ৬০ বছর বয়সী ধীরাজ পাল। ধীরাজ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরের মৃত দিজেন্দ্র পালের ছেলে।
ধীরাজ হত্যা মামলাটি এখন তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা বলেন, ‘আমরা এই হত্যা রহস্য উদঘাটনে আন্তরিকভাবে কাজ করছি। জেলা পুলিশও এ ব্যাপারে কাজ করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ধারণা করছি, গ্রেপ্তারদের মধ্যেই হত্যাকারী রয়েছে। তবে তারা কেউ স্বীকার করছে না। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
মামলা সূত্রে জানা যায়, বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুরে ইটভাটার ব্যবস্থাপক ধীরাজ পালের মরদেহ গত বছরের ২৮ মে দুপুরে ইটভাটা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন নিহতের ছেলে প্রভাকর পাল অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে বালাগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে পাঁচজনকে রিমান্ডেও নেয়া হয়। তবে তাদের কাছ থেকে হত্যার ব্যাপারে কোনো তথ্য আদায় করতে পারেনি। বর্তমানে গ্রেপ্তার হওয়া সবাই জামিনে রয়েছেন।
প্রথমে মামলাটির তদন্তে ছিল বালাগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। তবে তদন্তকারী সংস্থার বদল হলেও মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। হত্যার রহস্য এখনও থেকে গেছে অনুদঘাটিত।
এ বিষয়ে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন বলেন, ‘প্রকাশ্যে একটি হত্যার ঘটনা এক বছরেও কোনো ক্লু উদ্ধার না হওয়ায় আমরা হতাশ। এই মামলায় তদন্তকারী সংস্থার আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ।’‘আমরা এখন অভিযোগপত্রের অপেক্ষায় আছি। তা পেলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে’ বলেন তিনি।
মামলার এজাহার ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ধীরাজ পাল ৮ বছর গহরপুরের ওই ইটাভাটায় ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রাতে সেখানেই ঘুমাতেন তিনি। প্রতি শুক্রবার সেখান থেকে আলমপুরে নিজ বাড়িতে আসতেন।
২৮ মেও ছিল শুক্রবার। এদিন বিকেলে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরেই ইটভাটায় নিজ কার্যালয়ের সামনে মাথা ও শরীর ক্ষতবিক্ষত করে তাকে হত্যা করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
মামলার এজাহারে ইটভাটার কর্মীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, জুমার নামাজের সময় হত্যা করা হয় ধীরাজ পালকে। এ সময় ইটভাটার সব কর্মী মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। তখন পুরো ইটভাটা ফাঁকা ছিল।
মামলার পর ৩০ মে ইটভাটার ব্যবসায়িক অংশীদার ও ক্যাশিয়ার মেরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সহকারী ব্যবস্থাপক সুহেদ আহমদ ও সিএনজি অটোরিকশাচালক রুবেল আহমদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাদের চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এরপর ইকবাল হোসেন নামে এক ট্রাকচালক ও ইটভাটার নৈশপ্রহরী রাসেল আলীকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। পরে গ্রেপ্তার করা হয় তোফায়েল আহমদ নামে আরও একজনকে ।
তবে ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করেও হত্যার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিরাও আদালতে স্বীকারোক্তি দেননি।
এ হত্যাকাণ্ডের বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে।
ধীরাজ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও রহস্য উদঘাটনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সিলেটের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মদ বরাবর স্মারকলিপিও দেয়া হয়।
নিহতের ছেলে ও মামলার বাদী প্রভাকর পাল বাপ্পা বলেন, ‘একটা লোককে প্রকাশ্যে খুন করে ফেলা হলো, অথচ পুলিশ বা সিআইডি এক বছরেও কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারল না। এটি আমাদের পরিবারের জন্য চরম হতাশার। পুলিশের আন্তরিকতা নিয়েই আমাদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে আর কিছুদিন চললে তো আরও অনেক ঘটনার মতো এই হত্যা মামলাও ধামাচাপা পড়ে যাবে। আর আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হব।’