• জুন ১২, ২০২২
  • জাতীয়
  • 229
সুষ্ঠু ভোটে নির্দলীয় সরকার জরুরি: মাহবুব তালুকদার

নিউজ ডেস্কঃ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ এবং সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের আলোচিত কমিশনার মাহবুব তালুকদার এমন সব পরামর্শ দিয়েছেন, তাতে সংবিধান সংশোধনসহ নানা আইন পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার জরুরি, ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেয়াও দরকার। তবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোট এবং সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের বিধান করা হয়েছে।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক মতবিনিময় সভায় এই পরামর্শ দেন সদ্যবিদায়ী এই নির্বাচন কমিশনার। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও সচিবদের সঙ্গে এই মতবিনিময় আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি মনে করি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংলাপ অনিবার্য। আমি যে রূপরেখা উপস্থাপন করলাম তা বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করা জরুরি।’

২০১৭ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে নির্বাচন কমিশন ছিল, সে সময় দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব তালুকদার। এই কমিশনের অধীনেই হয় একাদশ সংসদ নির্বাচন, যে নির্বাচন নিয়ে পরাজিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপক আপত্তি ছিল। আগের রাতেই ভোট হয়ে যাওয়ার মতো জোরালো অভিযোগের কোনো জবাব নির্বাচন কমিশন সে সময় দিতে পারেনি।

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এই কমিশন কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারেনি বলে বিস্তর অভিযোগ ছিল।

এই কমিশনে মাহবুব তালুকদারের অবস্থান ছিল একটু অন্য রকম। তিনি কমিশনের সঙ্গে বরাবর দ্বিমত পোষণ করে আলোচনায় এসেছেন। সে সময়ের সিইসির সঙ্গে তার নিয়মিত বাদানুবাদের বিষয়টিও গণমাধ্যমে এসেছে।

এই কমিশনের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এলেও বিএনপি ও সমমনারা বর্তমান কমিশনের অধীনে ভোটে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তাদের দাবি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার।

মাহবুব তালুকদার মনে করেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। তিনি বলেন, ‘আমার মতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে একটাই চ্যালেঞ্জ। তা হচ্ছে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে গেলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। গ্রহণযোগ্য সরকারই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে।’

ভোটের আগে সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ জরুরি বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের দেশের বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি আসনে বর্তমানে অধিষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের পদে বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা ব্যাকুলতা মাত্র। নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সম্ভব না।’

নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত করার পরামর্শও দেন মাহবুব তালুকদার। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের বদলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করতে বলেছেন তিনি। পুলিশের কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটর করার পরামর্শ দেন তিনি।

মাহবুব বলেন, ‘যদি একান্তই জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং অফিসার পদে নিয়োগ করতে হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়ের আগে তাদের ভিন্ন জেলায় বদলি করা আবশ্যক।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় নুরুল হুদা ছাড়াও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করা সিইসি শামসুল হুদা, ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় সিইসি বিচারপতি আব্দুর রউফ; সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, মাহবুব তালুকদার ও আবু হাফিজও উপস্থিত ছিলেন।

সাবেক সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও মোহাম্মদ সাদিক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান ও বেগম জেসমিন টুলীও এ সময় বক্তব্য রাখেন।