- জুন ১৯, ২০২২
- শীর্ষ খবর
- 229
![আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার পানি পান করছেন বানবাসী মানুষজন](https://sylhettimesbd.com/wp-content/uploads/2022/06/5-12.jpg)
নিউজ ডেস্কঃ মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ নেই। বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই। একমাত্র শৌচাগারটি পানির নিচে। একটি চুলায় পাঁচটি পরিবারের রান্না করা হয়। এ জন্য পানি বিশুদ্ধ করতে ফুটানো যাচ্ছে না। নেই পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও। বাধ্য হয়ে বন্যার পানি পান করছেন তাঁরা। কারও কাছে যে সাহায্য চাইবেন, সেই উপায় নেই।
বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় তেলিখাল উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের মো. সেলিম আহমদ (৪০) রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় কথাগুলো বলছিলেন। ওই কেন্দ্রে আশপাশের গ্রামগুলোর প্রায় ৭৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
স্ত্রী, মা, বোন ও একমাত্র ছেলেকে আশ্রয়কেন্দ্রের সামনে নৌকা থেকে নামাতে নামাতে সেলিম আহমদ বলেন, ‘আজ (রোববার) আকাশের অবস্থা ভালো বলে পরিবারের লোকজন নিয়ে বাড়িঘর দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, চেনার উপায় নেই। এখনো ঘরের চালসমান পানি। দিনমজুরি করে সংসার চলত। পানি নেমে গেলে আবার কিভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করব—এ চিন্তায় কিছুই ভালো লাগে না। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার কই পাব, সেই চিন্তা তো আছেই।’
তেলিখাল গ্রামের নেহেরু বেগমের (৫০) ঘরবাড়িও ডুবে গেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তেলিখাল উচ্চবিদ্যালয়ের নিচতলায় আশ্রয় নিয়েছেন তিনিসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য। আজ সকালে নৌকায় করে গিয়ে ঘরের পাশে গাছের ডালের সঙ্গে আটকে থাকা কিছু কাপড় উদ্ধার করেছেন। সেগুলো আশ্রয়কেন্দ্রের আঙিনায় বসে ধুয়ে নিচ্ছিলেন নেহেরু বেগম। এ সময় তাঁর কিশোরী মেয়ে তায়েফা বেগম সাহায্য করছিল।
নেহেরু বলেন, ‘ঘরবাড়ি ডুবে গেছে বন্যায়। আসবাব তো গেছেই—ঘরের চালা থেকে শুরু করে ছাউনি কিছুই নেই। এখন আমরা নিঃস্ব। পানি কমে গেলে হয়তো নিজের ভিটামাটিও চিনতে পারব না। সব হারিয়ে অকূল দরিয়ার ভাসছি আমরা।’
তেলিখাল নয়বাড়ির মিনারা বেগম (৬৫), লামাদিস্কি গ্রামের হিরণ বিশ্বাস (৫০), তেলিখাল গ্রামের ইন্তাজুর রহমানদেরও (৬৭) একই দশা। এর মধ্যে মিনারা বেগমের ঘরের বেড়া স্রোতে ভেসে গেছে। শুধু কয়েকটা খুঁটির ওপরে চালা দাঁড়িয়ে আছে। সেটিও কতক্ষণ টিকবে, তা জানা নেই।
চার ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে আবার কিভাবে সংসার গোছাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত মিনারা বেগম বলেন, ‘স্বামী মারা গেছে। ছেলে নৌকা চালিয়ে ও মাছ ধরে সংসার চালায়। এভাবেই চলছিল সংসার। এর মধ্যে বন্যা সব কেড়ে নিল। এখন থালাবাটি আর কাঁথা–কম্বল ছাড়া আর কিছু নেই আমার।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা পানির নিচে রয়েছে। উপজেলা পরিষদ, থানা, প্রধান বাজার সবগুলোই এখন বন্যাকবলিত। তেলিখাল গ্রামের ইন্তাজুর রহমান (৬৭) বলেন, ‘এমন বন্যা আর দেখিনি। ১৯৯৮ বা ২০০৪ সালের বন্যাও এত ভয়াবহ ছিল না।’
‘আটজনের পরিবারে ছেলে মাছ ধরে বিক্রি করে। বন্যার পানিতে সব ভাসিয়ে নেওয়ার পর ঘরে আর কিছু নেই। এখন আশ্রয়কেন্দ্রে কোনোরকমে একমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে আছি’, কথাগুলো বলতে বলতে চোখ মুছছিলেন ইন্তাজুর।