• আগস্ট ৪, ২০২২
  • শীর্ষ খবর
  • 265
বন্ধ কক্ষে অচেতন মা-ছেলে হাসপাতাল থেকে বাসায়, এখনো আইসিইউতে মেয়ে

নিউজ ডেস্কঃ সিলেটের ওসমানীনগরে বন্ধ কক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্যকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর ৯ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে দুজনকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ওই পরিবারের মা ও এক ছেলেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে পৌঁছে দেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা।

গত ২৬ জুলাই বেলা ১১টার দিকে ওসমানীনগরের তাজপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসার দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে দরজা ভেঙে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী রফিকুল ইসলাম (৫০), স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪৫), ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২৫), মাইকুল ইসলাম (১৭) ও মেয়ে সামিরা ইসলামকে (২০) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর রাফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মা, ছেলে ও মেয়ে। ৯ দিন চিকিৎসা শেষে বুধবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে দুজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ তাঁদের তাজপুরের ওই ভাড়া বাসায় পৌঁছে দেয়। এখনো হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন মেয়ে সামিরা ইসলাম।

বুধবার বিকেলে তাজপুরের ওই বাসায় উপস্থিত হন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহরিয়ার বিন সালেহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) মো. রফিকুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা।

পুলিশ জানায়, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মা-ছেলেকে তাঁদের ভাড়া বাসায় পৌঁছে দেওয়ার পর পুলিশ সুপারসহ অন্য কর্মকর্তারা বাসাটি ঘুরে দেখেন। এ সময় ওই ঘরে থাকা একটি জেনারেটরের চালু করে পর্যবেক্ষণ করেন তাঁরা।

নিউজ ডেস্কঃ সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথমিকভাবে বিষক্রিয়া হয়েছে বলে ধারণা করছিলাম। পরবর্তীকালে সাফোকেশনের কারণে এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করেছি। ঘরে থাকা জেনারেটরটি ওই দিন প্রায় দুই ঘণ্টা চালু করা ছিল বলে জানা গেছে। এটি চালু থাকলে নাকে জ্বালা উঠে যায়। আমরা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি। সেগুলোর প্রতিবেদন এলে আরও তথ্য জানা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, হোসনে আরা বেগমও বলেছেন, ওই দিন জেনারেটর চালু ছিল। জেনারেটর চালু থাকলে ছোট ছেলে মাইকুলের শ্বাস নিতে সমস্যা হতো। পুলিশ জেনারেটরের ধোঁয়ার আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে।

জানা গেছে, ওই ভাড়া বাসায় তিনটি শোবার ঘর, একটি বসার ঘর এবং একটি খাবারঘর রয়েছে। জেনারেটরটি খাবারকক্ষের পাশেই ছিল।

হোসনে আরা বেগমের ভাই সেবুল মিয়া বলেন, বাড়িতে ফেরার পর তাঁর বোন কান্নাকাটি করছেন। ওই দিনের কথা তিনি স্মরণ করতে পারছেন না। বলেছেন, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পর অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন। পরে জ্ঞান ফিরে তিনি নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পান। এর বাইরে তিনি আর কিছু বলতে পারেননি।

সেবুল মিয়া আরও বলেন, ওই ভাড়া বাসায় এখনো আগের মতো সব মালামাল রয়েছে। সেগুলো বোনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভাড়া বাসাটিতে বর্তমানে মা-বাবা এবং ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন এবং তাঁর স্ত্রী আছেন। তবে তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকনে। বোন হাসপাতাল থেকে তাজপুরে আসবেন শুনে তিনি তাঁদের এগিয়ে নিয়ে এসেছেন।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল গাফফার বলেন, মা-ছেলে সুস্থ হওয়ায় দুপুরেই তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে মেয়ের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।

যুক্তরাজ্যপ্রবাসী পরিবারটি গত ১২ জুলাই দেশে আসে। ঢাকায় অবস্থানের পর ১৮ জুলাই তাঁরা সিলেটের ওসমানীনগরের তাজপুরে ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন। ওই ভাড়া বাসার তিনটি কক্ষ। রফিকুল ইসলামের শ্বশুর-শাশুড়ি একটি কক্ষে, আরেকটি কক্ষে শ্যালক ও তাঁর স্ত্রী-সন্তান এবং আরেকটি কক্ষে পাঁচ সদস্যের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী পরিবারটি থাকতেন।