- আগস্ট ১৬, ২০২২
- লিড নিউস
- 209
নিউজ ডেস্কঃ চা ম্রমিকদের মজুরি বৃদ্দির দাবিতে শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে চা বাগানগুলোর মালিকপক্ষ উপস্থিত না হওয়ায় হয়নি কোন সুরাহা, ফলে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ে চা-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের দুই দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে আগামী ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানান শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী এনডিসি। কিন্তু কোনো বাগানের মালিকপক্ষ বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় মহাপরিচালকের কথা রাখেননি চা-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। তারা কর্মসূচি স্থগিত করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
শ্রমিক ধর্মঘটে গত আট দিন ধরে সারা দেশের বাগান থেকে চা পাতা উত্তোলন, কারখানায় প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের চা শিল্প। মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবিতে তাদের এই আন্দোলন।
জানা গেছে, চা শিল্পের অচলাবস্থা কাটাতে মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ে চা-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী এনডিসি। দুপুরে হওয়া প্রথম দফা বৈঠকে চা-শ্রমিক নেতাদের আগামী ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানান তিনি। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চা-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মহাপরিচালকের এ আহ্বানে সাড়া দেননি। ফের বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে ১ ঘন্টা সময় দিয়ে প্রাথমিকভাবে বৈঠক শেষ করেন শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কিন্তু বিকেলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা বৈঠকেও চা শ্রমিক নেতারা তাদের কর্মবিরতে চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় সমাধান ছাড়াই শেষ হয় শ্রম অধিদপ্তর ও চা শ্রকিদের বৈঠক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। গত কয়েকদিনে গাছে গাছে সবুজ পাতা আর কুঁড়ি অঙ্কুরিত হয়েছে। ফ্যাক্টরিতে নিয়ে এসব পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের ঠিক এই সময়ে স্থবির হয়ে পড়েছে চা শিল্পের যাবতীয় কর্মযজ্ঞ। এতে কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে সরকারের।
গত ৯ আগস্ট থেকে নূন্যতম ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে প্রতিদিন দু্ই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে চা শ্রমিকরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার চা বাগানগুলোর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসার চেষ্টা করে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। কিন্তু মালিকপক্ষের কেউ ওই বৈঠকে আসেননি। এ অবস্থায় শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে পূর্ণ কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। আজ মঙ্গলবার বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে শ্রমিক অধিদপ্তরের সঙ্গে ফের বৈঠক হলেও এতেও কোনো বাগানের মালিকপক্ষ উপস্থিত না হওয়া এ বৈঠকও ফলপ্রসু হয়নি। তাই শ্রমিকরা ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
দেশে নিবন্ধিত ১৬৭টি চা বাগানের মাঝে বৃহত্তর সিলেটেই ১৩৫টি। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯১, হবিগঞ্জে ২৫ ও সিলেটে ১৯টি। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ২২, পঞ্চগড় জেলায় ৭, রাঙামাটিতে ২ এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি চা বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে ৯ কোটি ৭০ লাখ কেজি চা পাতা উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। তবে শ্রমিক ধর্মঘটে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শ্রম অধিদপ্তর ও মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হওয়া উভয়পক্ষের জন্য ভালো ছিলো। উত্তোলন না হওয়ায় গত এক সপ্তাহে চা গাছের পাতা ও কুঁড়ি লম্বা হয়ে গেছে। আরও দু-চারদিন চলে গেলে এসব পাতার পূর্ণ গুণগত মান আর পাওয়া যাবে না।
মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা সিলেটভিউ-কে বলেন, আজকের (মঙ্গলবারের) বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের একটাই দাবি ছিলো- দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা। কিন্তু আজকের বৈঠকেও মালিকপক্ষ কেউ ছিলেন না। আমাদের দাবিও মানা হয়নি। তাই আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।
তিনি বলেন, এই দাবিতে আমরা গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছি। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি দাওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবারও চা বাগানগুলোর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। কিন্তু মালিকপক্ষের কেউ বৈঠকে আসেননি। এতে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। এরপর আমরা গত শনিবার সকাল ছয়টা থেকে দেশের সবগুলো চা বাগানে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করি। আজও ফলপ্রসু বৈঠক না হওয়ায় এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কাল (বুধবার) থেকে আমরা বিক্ষোভ-মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবো।