• আগস্ট ১৯, ২০২২
  • লিড নিউস
  • 368
হবিগঞ্জে বন বিভাগের রবারবাগান আ.লীগ নেতার ‘দখল’

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় বন বিভাগের রূপাইছড়া রবারবাগানের প্রায় ২৪ একর জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। বনের জায়গায় তিনি গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শুধু দখলই নয়, বনের মাটি ও ছড়া থেকে বালু তুলে বিক্রির অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম মো. মুদ্দত আলী। তিনি বাহুবলের পুটিজুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। মুদ্দত পুটিজুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। পাশাপাশি হবিগঞ্জ জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি পদেও আছেন তিনি।

পরিবেশ, বন ও জলবাযু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কপোরেশনের আওতাধীন রূপাইছড়া রবারবাগানটি পুটিজুরী ইউনিয়নে অবস্থিত। ১৯৮০-৮২ সালে স্থাপিত ১ হাজার ৯৬৩ একর আয়তনের রূপাইছড়া দেশের অন্যতম রবারবাগান। ১৭ বছর ধরে বাগানটির প্রায় ২৪ একর জায়গা মুদ্দত আলী দখল করে রেখেছেন বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। বন থেকে তাঁকে উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে মুদ্দত আলী অভিযোগ তুলে নিতে রবারবাগানের ব্যবস্থাপকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি ও ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ বাহুবল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।

তবে মুদ্দত আলী বনের জায়গা দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মাটি ও বালু ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সরকারি কোনো ভূমি দখল করেননি। যে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তার ক্রয়সূত্রে মালিক তিনি। তবে কতটুকু জায়গা, কার কাছ থেকে ক্রয় করেছেন, সেই তথ্য বা কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।

বন বিভাগের অভিযোগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান মো. মুদ্দত আলী ২০০৫ সাল থেকে রবারবাগানের পশ্চিম ও উত্তর দিকের প্রায় ২৪ একর ভূমি দখল করে রেখেছেন। দখল করা টিলা শ্রেণির ভূমি কেটে মাটির ব্যবসা করছেন। পাশাপাশি রবারবাগানের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্মশানছড়া জলধারা থেকে বালু তুলে বিক্রি করছেন।

তাঁর এমন কর্মকাণ্ডের রূপাইছড়া রবারবাগানের পশ্চিম ও উত্তর দিকে অবস্থিত ৬০ ফুট উচ্চতা ও ৩০০ ফুট প্রস্থের ২টি টিলা ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। এ টিলাগুলো স্থানীয়ভাবে সেগুন টিলা হিসেবে পরিচিত ছিল। রবারবাগানের টিলা কেটে মাটি বিক্রি ও গাছগাছালি বিক্রি করে মুদ্দত আলী এখন আর্থিকভাবে বিত্তশালী হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয় কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, মুদ্দত আলীর মাটির ব্যবসার কারণে ওই এলাকায় ৭ বিঘা আয়তনের একটি খেলার মাঠ, মাঠের পূর্ব দিকে রবারবাগানের নার্সারির জায়গা ও ১২ ফুট প্রস্থের একটি সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। অথচ প্রশাসন অভিযোগের সত্যতা পেয়েও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

চলতি মাসের প্রথম দিকে মুদ্দত আলী তাঁর দখল করা জমিতে সোনার বাংলা রাবার অ্যান্ড ফ্রুটস প্রোডাক্ট প্রজেক্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই জায়গার পাশেই গড়ে তোলেন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক ব্যাটারি থেকে সিসা খোলার কারখানা।

এমন অবস্থায় বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কপোরেশনের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) শোভন কান্তি সাহা ১১ আগস্ট হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি দেন। তাঁতে এ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মো. মুদ্দত আলী গত ১৭ বছরে ১৮ দশমিক ৭৪ একর আয়তনের সেগুন টিলা ও জ্বালানি কাঠের আরও ৫ একর ভূমিসহ মোট ২৩ দশমিক ৭৪ একর ভূমি দখল করে রেখেছেন। তাঁরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেও এ দখলকারকে উচ্ছেদ করতে পারেননি। তাই এ বন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসনকে উচ্ছেদ মামলা করার দাবি জানান।

রূপাইছড়া রবারবাগানের ব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, মুদ্দত আলী স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাঁর সঙ্গে কোনোভাবেই পেরে উঠছেন না তাঁরা। সরকারি জায়গা দখলের অভিযোগ আনায় তিনি প্রতিনিয়ত হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। যে কারণে ১০ আগস্ট বাহুবল থানায় জিডি করেছেন।

জানতে চাইলে বাহুবলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযুক্ত মুদ্দত আলী দাবি করেন, তিনি ক্রয়সূত্রে এ জায়গার মালিক। তাই উভয় পক্ষকে নিজেদের মালিকানা প্রমাণের জন্য তিন কার্যদিবসের সময় দেওয়া হয়েছে। কাগজপত্র দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’