• আগস্ট ২৪, ২০২২
  • লিড নিউস
  • 354
‘মাড় দিয়া ভাত খাইয়া আছি’!

মামুন হোসেনঃ ‘আমরাত এই দেশেরই মানুষ, আমরার লাগি একটু মায়াও হয়না তারার। কিতা কইতাম দাদা, এই কয় দিনে, মাড় দিয়া ভাত (ভাতের ফেন) খাইয়া বাচিয়া আছি। ঘরে কোন পয়সাপাতিও নাই। নিজেরা কোন মতে খাইতে পারলেও বাচ্চারা খাইতে পারে না। তারারে ভাতের সাথে কচু সেদ্ধ করিয়া দিছি।’ এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলছিলেন সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগানের শ্রমিক অনিতা বাউরি।

বুধবার (২৪ আগস্ট) সিলেট বিভাগের ২৩ চা বাগানের সকল শ্রমিক ১২ দিন ধরে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে টানা কর্মবিরতি পালন করছেন।

কর্মবিরতি চলাকালে মালনীছড়া চা-বাগানের পূজা মণ্ডপের পাশের মাঠের কোণায় বসে অনিতা বাউরি বলেন, ‘আমার ১২ বছর বয়স থেকে এই বাগানে কাজ করছি। প্রায় ২৮ বছর হইল, কি পাইলাম আমরা। ১২০ টাকা মজুরি দিয়া চাল, ডাল আর তেলই কিনা যায় না ঠিকমত। বাচ্চারারে মাছই খাওয়াইতে পারিনা মাসে একবার, মাংসের কথা আর নাই বললাম।’

আরেক চা শ্রমিক বিভা বাড়ৈর বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। স্বামী বাবুল বারী মারা গেছেন বছরে কয়েক আগে, চার মেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে নিয়ে সংসার তার। আক্ষেপ করে বলেন, সাড়ে আট টাকা মজুরিতে বাগানে কাজ শুরু করেছিলাম, জীবন-যৌবন বাগানেই বিলিয়ে দিলাম, শেষ বয়সে এসে চিড়া-মুড়ি খাইয়া দিন কাটাতে হচ্ছে। কোন সময় ভাত আলু ভর্তা আবার কোন সময় পানি। আমরা তো বেশী কিছু চাইনা। ন্যায্য মজুরি ৩০০ টাকা চাইছি। ভোটের সময় সবাই আসে ভোট নিতে কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে বিধবা ভাতাটাও দেয়না আমরারে।’

উল্লেখ্য, ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় দৈনিক মজুরি উন্নতকরণের দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিক গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নেমেছেন। ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের পর গত ১৩ আগস্ট থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। আন্দোলন থামাতে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান আসেনি। চলমান জটিলতা নিরসনে সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দফতর অফিসে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল বৈঠকে বসেন। তিনপক্ষীয় ওই বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নেতারা এ সিদ্ধান্ত মেনে আসলেও শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।