- আগস্ট ২৬, ২০২২
- রাজনীতি
- 284
নিউজ ডেস্কঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, এ বিষয়ে দুটি তারিখের কথা জানালেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক। তিনি ইঙ্গিত করেছেন, ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের ২৪ জানুয়ারি ভোট হবে।
তবে নির্বাচন কমিশন এখনও ভোটের তারিখ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা নির্বাচনের রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত তৈরি করেছে। সেটি চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশ করার কথা। আর ভোটের আগাম তারিখ ঘোষণাকে ‘মনগড়া কথা’ বলেছেন একজন কমিশনার।
এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কীভাবে ভোটের তারিখ জানালেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্ণধার।
শুক্রবার দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনায় নানক আগামী নির্বাচনের কথা ইঙ্গিত করে বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘আসেন না মির্জা ফখরুল সাহেবরা আগামী বছরের ২৩ ডিসেম্বর অথবা ২৪ জানুয়ারিতে। আমি জানি আপনারা আসতে পারবেন না, কারণ, তারেক রহমান যেহেতু আসতে পারবেন না। মির্জা ফখরুল সাহেব, তারেক রহমান আপনাদেরকে নির্বাচনে আসতে দেবেন না। তাহলে কী চান? আবার বাংলাদেশে ২১ আগস্ট চান?’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি এই আলোচনার আয়োজন করে।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্দেশে নানক বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ শিক্ষা দিয়ে দেবে। আসেন না, খেলোয়াড়ি মনোভাব নিয়ে। আসেন না নির্বাচনে। দেখি বাংলাদেশের জনগণ কাকে রায় দেয়। উন্নয়নের পক্ষে রায় দেয় নাকি ধ্বংসের পক্ষে রায় দেয়।’
আওয়ামী লীগ নেতা যে ভোটের তারিখ বলে দিলেন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কী জানে জানতে নির্বাচন আয়োজনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবিধানিক সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তো এখনও অনেক দেরি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
একই প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব বলেন, ‘তারিখ যে কেউ ঘোষণা করেছে, সেটা তো দেখিনি, জানি না। তফসিল ঘোষণা করার আইনগত সাংবিধানিক অধিকার শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের। এ ব্যাপারে মনগড়া যদি কেউ বলে থাকে, সেটা তার ব্যাপার।’
আগামী নির্বাচন কবে হবে, সে প্রশ্নে আগের দিন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে করতে হবে। মেয়াদ শেষ হবে ৩০ তারিখের (২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি) মধ্যে। সুতরাং এর আগে ৩০ দিনের মধ্যে করলেই হবে।’
এই জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়েই এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কমিশন। এখন পর্যন্ত কেবল রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। সেটিও প্রকাশ করা হয়নি। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বোচ্চ দেড় শ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কতগুলো আসনে শেষ পর্যন্ত হবে, সেই সিদ্ধান্তও নেয়া যায়নি।
আবার ভোটে সেনা মোতায়েন, নির্বাচনের সময় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে হবে- এসব বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে কখনও তারিখ সম্পর্কে জানাও যায় না।
২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সংবিধান অনুযায়ী প্রথম অধিবেশন বসার আগের ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনো দিন ভোট হতে হবে।
সেই হিসেবে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির ভোট হতে হবে। সেই হিসেবে ভোটের বাকি এখন ১৫ থেকে ১৮ মাসের মতো সময় বাকি।
তার আগেই নানক কীভাবে ভোটের সম্ভাব্য তারিখ বলে দিলেন, সে বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
নির্বাচন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোটের তারিখ নির্ধারণ তো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু কেউ যদি আগ বাড়িয়ে বলে দেয়, তাহলে তো সমস্যা।’
নানক ভোট ছাড়াও কথা বলেন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম জোটের হরতাল নিয়ে। তিনি বলেন, ‘গতকাল একটি হরতাল পালন হয়ে গেল দেশে। কেউ টের পেল না, রাস্তায় যানজট।… আবার দেশে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।’
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমাদেরকে খুব সতর্ক হতে হবে। ওরা আবার নেমেছে। ওরা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে না। সেই কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা নেমেছেন। পাকিস্তানি প্রেসক্রিপশনে এসব হচ্ছে।’
সরকারের সমালোচনা করে আসা নাগরিক সমাজের সদস্যদেরও তুলোধোনা করেন নানক। বলেন, ‘এই দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছে, কোথায় মানবতা? এই দেশে ১৫ আগস্টে হত্যার পরে বঙ্গবন্ধুর বেঁচে থাকা দুই কন্যা শেখ হাসিনা শেখ রেহানার… মানবিক অধিকার কোথায় ছিল এ দেশের সুশীল সমাজের?
‘ধিক্কার দেই, যারা সেদিন কথা বলে নাই হত্যার বিরুদ্ধে। নিন্দাটুকু পর্যন্ত করে নাই। তারা আজকে বড় বড় কথা বলে।’
‘সুশীল সমাজ’ থেকে সাবধান থাকতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। জনগণের শক্তি-সাহস নিয়ে আওয়ামী লীগ টিকে ছিল। তারা চার জাতীয় নেতাকে কারাগারের অভ্যন্তরে হত্যা করে ভেবেছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে। কিন্তু সেটি হয়নি।’