- আগস্ট ২৯, ২০২২
- লিড নিউস
- 212
নিউজ ডেস্কঃ আফিয়া বেগম সামিহাকে (৩০) খুন করতে মাজেদা খাতুন মুন্নীকে (২৯) ব্যবহার করেন ‘কথিত’ স্বামী ইসমাইল নিয়াজ খান। বিদেশে নেওয়া ও দুই লাখ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে আফিয়াকে খুন করান নিয়াজ।
আর নিয়াজের প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করে নেন পাওনা টাকা নিয়ে আফিয়ার ওপর ক্ষেপে থাকা তার রুমমেট মুন্নী। ক্ষোভ ও লোভে পড়ে পাটার শিল দিয়ে আঘাত করে আফিয়াকে খুন করেন মুন্নী। হত্যার খবর নিয়াজকে জানাতে রাতে ও পরদিন সকালে হোয়াসঅ্যাপে কল দিলেও তিনি কলরিসিভ করেননি।
রোববার (২৮ আগস্ট) বিকেলে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আমলী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া মাজেদা খাতুন মুন্নী।
তার জবানবন্দী দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, জবানবন্দী নেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে মুন্নীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নিহতের ‘কথিত’ স্বামী নিয়াজ খানকেও চারদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে নিয়াজ হত্যার বিষয়ে তথ্য কৌশলে এড়িয়ে যায়। অবশ্য মুন্নী জবানবন্দীতে নিয়াজের নাম বলেছেন।
মুন্নীর স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, আফিয়ার সঙ্গে মুন্নী সাবলেট থাকতেন। মাসে অন্তত ১৫/১৬ দিন থেকে বাড়িতে যাওয়া-আসা এবং ভালো সম্পর্কও ছিল তাদের। নিয়াজের নামে মামলা চালাতে গিয়ে মুন্নীর কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ১৭ হাজার টাকা ধার নেন আফিয়া। টাকা চাইলে আফিয়া অস্বীকার করেন। এতে মুন্নী ক্ষুব্ধ হন। ১৮ আগস্ট মুন্নী বাসায় যান। ২০ আগস্ট রাত ১০টার দিকে পাওনা টাকা নিয়ে আফিয়া ও মুন্নীর মধ্যে ঝগড়া হয়। সেই রাত ১২টার দিকে রান্নাঘর থেকে পাটার শিল নিয়ে আফিয়ার মাথার বাম পাশে সজোরে পরপর দুটি আঘাত করেন মুন্নী। আঘাতের কারণে বিছানায় লুটে পড়েন আফিয়া। তবে আফিয়া মরে যাওয়ার জন্য মারেননি, আফিয়া মারা যাবে ভাবতে পারেননি মুন্নী।
জবানবন্দীতে মুন্নী জানান, আফিয়া জ্ঞান হারানোর পর রাতে বাসার কলাপসিবল গেট বন্ধ থাকায় বেরিয়ে যেতে পারেননি তিনি। পরদিন (২১ আগস্ট) ভোর আনুমানিক সোয়া ৫টার দিকে গেট খুললে রিকশা ডেকে মালপত্র নিয়ে রুমের দরজা তালাবদ্ধ করে চলে যান।
আসামি মুন্নী আরও জানান, বালুচরের ওই ভাড়া বাসায় তারা অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতেন। তাদের সহযোগিতা করতেন আফিয়ার ‘কথিত’ স্বামী নিয়াজ। একপর্যায়ে আফিয়ার সঙ্গে লেনদেন নিয়ে তারও বিবাদ সৃষ্টি হয়। আর নিয়াজের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না আফিয়ার। এ অবস্থায় নিয়াজের প্রস্তাবে ও নিজের আক্রোশ মেটাতে আফিয়াকে খুন করেন মুন্নী। কিন্তু আফিয়াকে খুন করলেও নিয়াজ আর ফোন ধরেননি। পরে র্যাবের হাতে মুন্নী ধরা পড়েন।
২৪ আগস্ট রাত ১২টার দিকে সিলেট নগরের উত্তর বালুচর ফোকাস-৩৬৪ সিকান্দর মহলের নিচতলার বাসায় দরজার তালা ভেঙে আফিয়ার মরদেহ এবং আলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া তার আড়াই বছরের কন্যাশিশুকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। আফিয়াকে প্রায় ৭৬ ঘণ্টা আগে খুন করা হয় বলেও ধারণা ছিল পুলিশের। এ ঘটনায় নিহত আফিয়ার মা কুটিনা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার ছায়াতদন্তে নেমে র্যাব-৯ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) খুনের ঘটনায় হবিগঞ্জ থেকে মাজেদাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার মুন্নী হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সারংপুর গ্রামের আব্দুল গণির মেয়ে। আর নিহত আফিয়া গোয়াইনঘাটের জাঙ্গাইল গ্রামের আজির উদ্দিনের মেয়ে।
এছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ আগস্ট রাতে দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি থেকে নিহতের ‘কথিত’ স্বামী ইসমাইল নিয়াজকে আটক করে পুলিশ। তিনি বরইকান্দি এলাকার ইসমত খানের ছেলে। তাকেও ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদে খুনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা এড়িয়ে যান নিয়াজ।
এদিকে পুলিশি তদন্তে নিয়াজের অপকর্ম বেরিয়ে আসতে থাকে। মূলত তার নামে মামলা দেওয়ায় আফিয়ার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। আফিয়া এক নারী চিকিৎসকের বাসার গৃহকর্মী থাকাকালে আশরাফুল নামে এক যুবকের কাছে বিয়ে দেওয়া হয়। আর নিয়াজ তাকে নিয়ে পালিয়ে যান। যে কারণে আগের স্বামী কোনো আইনি প্রক্রিয়ায়ও যাননি। অথচ নিয়াজের স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে এসে বিবাহবহির্ভূতভাবে এখানে-ওখানে বাসা ভাড়া করে, কখনো হোটেলে রাতযাপন করতেন। অর্থ আয়ে আফিয়াকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত করান। এরমধ্যে তাদের সন্তান জন্ম নিলে আফিয়াকে বিয়ে করতে টালবাহানা করেন নিয়াজ। যে কারণে তার নামে ২০২০ সালের ১২ জুলাই কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন আফিয়া। মামলার চার্জশিট দেওয়া হয় ওই বছরের ডিসেম্বরেই।
আসামি দেশ না ছাড়তে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়ে রাখেন। কিন্ত ধূর্ত নিয়াজ আগেই দেশ ত্যাগ করেন। জুন মাসে তিনি দেশে ফিরে ওই মামলায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন। ২ আগস্ট কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন নিয়াজ। মুন্নীর সঙ্গে আগে থেকে তার যোগাযোগ ছিল এবং আফিয়াকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে মুন্নীকে বিদেশে নেওয়ার ও দুই লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।