• সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২
  • জাতীয়
  • 236
পরিবার চাইলে খালেদার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়বে : আইনমন্ত্রী

নিউজ ডেস্কঃ পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে দুই মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ সরকার বাড়াবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইস্টিটিউটে শনিবার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচারকদের ১৪৭তম রিফ্রেশার কোর্সের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

এ মাসের শেষের দিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এরপর সেই মেয়াদ ফের সরকার বাড়াবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘উনারা (খালেদা জিয়ার পরিবার) বাড়াতে চান কি না, সেটা উনাদের ওপর নির্ভর করবে। যদি উনারা এটার মেয়াদ বাড়াতে চান, আমি একটু বলতে পারি, অবশ্যই সরকার এটার মেয়াদ বাড়াবে।’

অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, “গত প্রায় সাড়ে ১৩ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় উন্নয়ন ঘটেছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সমৃদ্ধ অর্থনীতির শত্রু হিসেবে খ্যাত ‘খেলাপি ঋণ’-এর পরিমাণ কমিয়ে আনতে চায়। কারণ ঋণখেলাপি মামলাজট দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে আমাদের অবশ্যই ঋণখেলাপি মামলাজট খুলতে হবে এবং এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ বাড়ার লাগাম টানতে হবে।

“ঋণখেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ সংশোধন করে আদালতের বাইরে এডিআর বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মামলার পক্ষগণের অনাগ্রহের কারণে এডিআর পদ্ধতির সফল প্রয়োগ হচ্ছে না। ঋণখেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এডিআর পদ্ধতিকে আরও কার্যকরভাবে অনুসরণ করতে হবে। এর পাশাপাশি শুনানি পর্যায়ে বিবাদীর অযৌক্তিক কালক্ষেপণ রোধ করতে হবে।”

মামলাজটের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, ‘দেশের আদালতগুলোতে সিভিল মামলার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি সম্পর্কিত। অনেক ফৌজদারি মামলার মূলেও রয়েছে ভূমি বিরোধ। এসব মামলার বিচার পাওয়ার জন্য প্রতিদিন লাখ লাখ বিচারপ্রার্থীকে আদালতে ধরনা দিতে হয়। এতে যে কেবল তাদের সময় ও অর্থ অপচয় হচ্ছে, তা নয়; মূল্যবান কর্মঘণ্টাও নষ্ট হচ্ছে।

‘যে সময়ে তাদের উৎপাদনের কাজে থাকার কথা, সে সময় আদালতের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে বিচার পাওয়ার প্রহর গুনতে হচ্ছে।’

তার আশা, বিচারকরা এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবেন এবং জনগণকে দ্রুত ন্যায়বিচার দিয়ে বিচার পাওয়ার দুর্ভোগ লাঘব করবেন।

প্রশিক্ষণার্থী বিচারকদের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সারা জীবনের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এমন এক স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গতিশীল বিচার বিভাগের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং অসহায় মানুষ স্বল্প খরচে দ্রুত ন্যায়বিচার পাবে। বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন বিচারক হিসেবে আপনাদের ওপরই নির্ভর করে। এই নির্ভরতা আপনাদের যেমন দায়িত্বশীল করেছে, তেমনি মর্যাদাবানও করে তুলেছে। আপনাদের দায়িত্ব পালনে আমরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি মাত্র।

‘আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, দক্ষতার সঙ্গে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনাদের দাপ্তরিক সমস্যার যুক্তিসংগত সমাধানসহ পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোটাও অপরিহার্য। আর পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। সে কারণে আমরা দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করে যাচ্ছি।’

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ডিত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আবেদনে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। এরপর খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশান এভিনিউর বাসা ফিরোজায় যান। নির্দিষ্ট সময় শেষে সাজার মেয়াদ ফের বাড়ানো হয়।

সবশেষে গত ২৪ মার্চ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

প্রতিবার একই শর্তে খালেদা জিয়াকে কারাগারের বাইরে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন না।