• সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২
  • রাজনীতি
  • 227
এই মুহূর্তে পদত্যাগ করুন: মির্জা ফখরুল

নিউজ ডেস্কঃ সরকারকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় মহানগর উত্তর বিএনপির এক নম্বর জোন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে ভোলার আবদুর রহিম, নূরে আলম ও নারায়ণগঞ্জের শাওন হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। একই দাবিতে রাজধানীতে ১৬টি সমাবেশ করবে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা এই দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে সেই ব্যর্থ সরকারকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই নির্বাচন কমিশনের (ইসি)অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা নতুন ইসি গঠন করে সব দলের অংশগ্রহণে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন চাই, সেটাই করব ইনশাল্লাহ। দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, জনগণের সংসদ প্রতিষ্ঠা হবে।

তিনি বলেন, প্রশাসনকে বলতে চাই জনগণকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। জনগণ থেকেই আপনারা এসেছেন। জনগণের ট্যাক্সের টাকায়ই আপনাদের বেতন হয়, সংসার চলে। সুতরাং এই জনগণকে সম্মান করবেন। বেআইনি নির্দেশ নিয়ে কথায় কথায় গুলি করবেন না। ওই যেমন র‌্যাবের ওপরে স্যাংশন এসেছে, ঠিক তেমনি যে কোনো বাহিনীর ওপরে স্যাংশন আসতে পারে। যদি তারা আইন না মেনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে থাকে। আমরা সারা দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি তেল, ডাল, চাল, লবনের দাম কমানোর জন্য। আন্দোলন করছি পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের দাম কমানোর জন্য। আন্দোলন করছি সারের দাম কমানোর জন্য। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।

আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার একটাও রক্ষা করতে পারেনি দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে বলেছিল, এখন চালের কেজি ৬০ টাকারও বেশি। ঘরে ঘরে চাকরি দেবে বলেছিল, এখন দেশে ছয় কোটি বেকার। বিনামূল্যে সার দেওয়ার কথা বলেছিল কিন্তু এখন সারের জন্য কৃষককে রাস্তা অবরোধ করতে হচ্ছে। ১২০০ টাকা বস্তায় দামেও সার পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আমরা কেন যুদ্ধ করেছিলাম? তারা আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছিল বলে। মিছিল মিটিং করতে দিতো না। সেজন্য যুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আজকে ৫১বছর পরও আমাদের মিছিল মিটিং করতে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। এর কাছে ওর কাছে অনুমতির জন্য ছুটতে হয়। চাল, ডাল, তেলের দাম কমানোর দাবিতে আমার ভাইয়েরা যখন মিছিল করে তখন তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। শত শত নেতাকে আহত করা হয়েছে। সভা সমাবেশ করা আমার সাংবিধানিক অধিকার। এই সরকার আজকে ভোট দিতে দেয় না। ২০১৮ সালে আগের রাতে ভোট নিয়ে গেছে। ২০১৪ সালে কোনো নির্বাচনই করেনি। ১৫৪টি আসনে ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় বসে গেছে। এইভাবে গত ১৪/১৫ বছর যাবত এই সরকার জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছে।

২০২৩ সালে আবার নির্বাচন আসছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সেই নির্বাচন নিয়ে পাঁয়তারা শুরু করেছে। কী পাঁয়তারা? ইভিএম দেবে। আরে ইভিএম কি? আমরাতো তোমাকেই মানি না। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকলে এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। কারণ তার অধীনে নির্বাচন হলে জনগণকে ভোট দিতে দেওয়া হয় না। নিজেরাই ভোট দিয়ে ঘোষণা করে যে আমরা নির্বাচিত হয়ে গেছি। সংসদ একটা আছে রাবারস্ট্যাম্প, আমরা বলি গৃহপালিত সংসদ। এই সংসদে জনগণের সমস্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, তেলের দাম বাড়ে সেসব নিয়ে আলোচনা হয় না। সেখানে শুধু একজনের তোষামোদি করা হয়।

খালেদা জিয়ার প্রতি অবিচার করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তাকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে সেটা কোনো মামলাই না। যে দুই কোটি টাকার জন্য তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে তা বেড়ে ৬ কোটি হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে ভয় পায় বলেই বিদেশে চিকিৎসা করতে সুযোগ দেওয়া হয় না। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। তাকে দেশে আসতে দিচ্ছে না। আজকে ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা।

মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, তাবিথ আউয়াল, মহিলা দলের চৌধুরী নায়াবা ইউসুফ, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল মজুমদার প্রমুখ।