- অক্টোবর ২৪, ২০২২
- জাতীয়
- 314
নিউজ ডেস্কঃ দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘সিত্রাং সিভিয়ার সাইক্লোন হিসেবে রুপ নিয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানবে। কেন্দ্র আঘাত করবে ভোরে। এটা পুরোপুরি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত করার কোনো সম্ভাবনা নাই। উপকূলীয় ১৩ জেলায় মারাত্মক ও ২ জেলায় হালকা আঘাত হানবে। তবে বরগুনার পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে সোমবার সন্ধ্যার দিকে। এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে আছে বরগুনা ও পটুয়াখালী।
সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে দুপুরে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
আবহাওয়াবিদদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে তিনি বলেন, ‘সিত্রাং সিভিয়ার সাইক্লোন হিসেবে রুপ নিয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানবে। কেন্দ্র আঘাত করবে ভোরে। এটা পুরোপুরি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত করার কোনো সম্ভাবনা নাই।
‘উপকূলীয় ১৩ জেলায় মারাত্মক ও ২ জেলায় হালকা আঘাত হানবে। তবে বরগুনার পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এনামুর রহমান বলেন, ‘উপকূলে ৭ হাজার ৩০ সেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। সকাল থেকেই মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। আমরা আম্ফানে ২৪ লাখ সরিয়েছিলাম। এবার ২৫ লাখ সরানোর লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে বেশি আঘাত হানবে। চট্টগ্রাম বিভাগের মহেশখালী, সন্দ্বীপ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখান থেকে মানুষ সরাতে কাজ চলছে।সিডর ছিলো সুপার সাইক্লোন। এটা সিভিয়ার সাইক্লোন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন মানুষও যদি মারা না যান সেটি হলো সবচেয়ে বড় সফলতা। পাশাপাশি, তাদের গবাদি পশুগুলোকেও সেন্টারে আনতে বলা হয়েছে। প্রতি জেলায় ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ড্রাই কেক ও বিস্কুট পাঠানো হয়েছে শুকনা খাবার হিসেবে। দুর্যোগে বিদ্যুৎ ও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে বলা হয়েছে।’
সিত্রাং এখন কোন পথে
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিত্রাং আরও ঘণীভূত ও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার ভোররাত বা সকালে খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে রাজধানীসহ দেশজুড়ে। ঢাকার বৃষ্টি ভোগান্তি বাড়িয়েছে অফিসগামীদের। রাতভর বৃষ্টি হয়েছে, একটানা বৃষ্টি হবে সোমবারও।
অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সকাল ৬টায় সিত্রাং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। রোববার মধ্যরাতে এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, যা সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছিল ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে।
সকালে এই ঘূর্ণিঝড় ছিল কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মধ্যরাতে ছিল ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, যে দূরত্ব সন্ধ্যায় ছিল ৭১০ কিলোমিটার। সিত্রাং সর্বশেষ মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। মধ্যরাতে ছিল ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, এই দূরত্ব সন্ধ্যায় ছিল ৭০০ কিলোমিটার।
পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকেও দূরত্ব কমেছে। সকাল ৬টায় ছিল ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে। এর দূরত্ব রোববার সন্ধ্যায় ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে থাকলেও মধ্যরাতে ছিল ৬০০ কিলোমিটার দূরে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝােড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর রয়েছে উত্তাল।
অধিদপ্তর বলছে, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরে ৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝােড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
সিত্রাংয়ের প্রভাব ইতোমধ্যে উপকূলসহ রাজধানীতে পড়েছে জানিয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, হালকা বৃষ্টি হচ্ছে, এটা আরও বাড়বে। সোমবার রাতটা মূলত ক্রুশিয়াল হবে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান সোমবার সকালে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উপকূল অতিক্রম করার সময় সিত্রাংয়ের গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন আমরা ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছি। একই সঙ্গে নৌ বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’