• নভেম্বর ১৪, ২০২২
  • জাতীয়
  • 204
রাতে ব্যালট বাক্স ভরার কথা আর কোথাও শুনিনি: জাপানি রাষ্ট্রদূত

নিউজ ডেস্কঃ নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার কথা পৃথিবীর আর কোথাও শুনিনি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি।

সোমবার রাজধানীর গুলশানে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ইতো নাওকি বলেন, ‘বাংলাদেশে গত নির্বাচনে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার যে অভিযোগ উঠেছে, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে কখনোই এমনটা শুনিনি। আশা করি আগামী নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না।

‘জাপান আশা করে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে। আমাদের অবস্থান হচ্ছে- অহিংস ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, যেখানে সব প্রধান দল অংশগ্রহণ করবে।’

নাওকি বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর জাপান দূতাবাস সহিংসতা নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিল। এটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। কারণ জাপান বাইরের কোনো দেশের নির্বাচনের পর বিবৃতি দেয় না।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বৈশ্বিক মতামতের একটা গুরুত্ব আছে। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন কমিশন এবং সরকার বলছে যে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করবে।’

পুলিশ কর্মকর্তারা সতর্ক হবেন আশা টোকিওর

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ভোটে পুলিশের বিতর্কিত অবস্থান দেখতে চায় না টোকিও। এক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তারা আরও সতর্ক হবেন বলে আমরা আশা করছি।

‘উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে আমাদের চাওয়া থাকবে, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা আরও সামনে এগিয়ে যাবে। আর তা চলমান রাখতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। সেজন্য আমাদের চাওয়া থাকবে- নির্বাচনে গণতান্ত্রিক উপায়ে সব দল অংশগ্রহণ করবে।’

‘বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়, সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের জানানো হয়েছে।, মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান জটিল বিষয়

এক প্রশ্নের জবাবে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য জটিল বিষয়। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সব সময়ই প্রাধান্য পাবে। কিন্তু মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত নয়। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কৌশলগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত জাপান।

রাডার সিস্টেম বিক্রির ইচ্ছা জাপানের

বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি করতে চায় জাপান। এই মুহূর্তে মোবাইল রাডার সিস্টেম বিক্রির জন্য জাপানের একটি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান ইতো নাওকি।

তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষাসামগ্রী রপ্তানির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটি জাপান তুলে নিয়েছে। আসিয়ান অঞ্চলের কয়েকটি দেশের সঙ্গে আমরা ইতোমধ্যে চুক্তি করেছি। এখন আমরা মোবাইল রাডার সিস্টেম বিক্রি করতে চাইছি। জাপানের একটি কোম্পানি ফিলিপিন্সের বিমানবাহিনীর কাছে ওই সিস্টেম বিক্রি করেছে। এখন তারা এখানে এটি বিক্রি করতে চায়।’

‘এখন আমরা যেটি করতে চাইছি সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে একটি অ্যারেঞ্জমেন্ট, যার মাধ্যমে জাপানিজ কোম্পানি এখানে প্রতিরক্ষাসামগ্রী রপ্তানি করতে পারে। বাংলাদেশে একটি পণ্যও যদি জাপান রপ্তানি করতে পারে তবে দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ভিন্ন রূপ পাবে।’

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কাঠামো

চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক কাঠামো গঠনের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানান ইতো নাওকি।

তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি কাঠামোর প্রয়োজন আছে। আমরা মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চেয়ে সমন্বিত অংশীদারত্বকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারণ এটি মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল কাঠামোর চেয়ে বড়।

‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বেসরকারি খাতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে। কারণ তারা বিনিয়োগ করবে। বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করার জন্য সমন্বিত অংশীদারত্ব অথবা মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘জাপানের একজন বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিতে এদেশে যেসব চ্যালেঞ্জ আছে সেগুলো আলোচনায় এলে এখানে সরকারের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।’

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন